বৈশ্বিক বাস্তবতায় পরিবর্তন আসুক দেশীয় পর্যটনে

ফাইল ছবি

দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু করোনার সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হলো। এই সংকট কাটিয়ে ওঠা অনেক দেশের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। একটা বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনীতি শুধু পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে টিকে আছে। এই অর্থনীতি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে পারে। করোনা মহামারির পর জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বলছে, চলতি বছরই পর্যটন আবার পুরোপুরি চালু হলে তিনটি দৃশ্য দেখা যাবে। শুধু ২০২১ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও পর্যটনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ৬১ কোটি পর্যটক ভ্রমণ করেছে।

পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। বাংলাদেশেও নানাভাবে এ দিবস পালিত হচ্ছে আজ।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাহলে দেশের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠবে আরো। পর্যটন শিল্পের প্রসার করতে টেলিভিশন, বেতার এবং ডিজিটাল মাধ্যমে পর্যটনকেন্দ্র সম্পর্কে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

একজন পর্যটক ১০ জনের কর্মসংস্থান করতে পারে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর অবদান বিশ্ব জিডিপির ১১ শতাংশ, বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের ৯ শতাংশ, বৈশ্বিক রপ্তানির ১২ শতাংশ এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগের ১১ শতাংশ। ৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়েছে পর্যটনে। ২০১৯ সালে ৩৩ কোটি মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে পর্যটন খাত। অন্য কোনো শিল্প নেই, যা অর্থনীতিতে একইভাবে টেকসই ও বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের সব শ্রেণির জন্য কর্মসংস্থান ও সুযোগ সৃষ্টি করে, পর্যটন অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন,পতেঙ্গা, কক্সবাজার, সিলেট,সুনামগঞ্জ ইত্যাদি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য প্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও সেসব জায়গার যোগাযোগ, নিরাপত্তা, খাবার দাবার নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসব সমস্যার সমাধান না করলে দেশের পর্যটন কোনোভাবে এগোবে না। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া—এ সাত জেলার অসংখ্য হাওর নিয়ে বিশাল পর্যটন অঞ্চল তৈরি করা যায়। সেখানে হাওরভিত্তিক পর্যটন বিকশিত হলে বর্ষায় অলস বসে থাকা ভাটি অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। পাহাড়ঘেরা সবুজ প্রকৃতি, নদী, ঝরনা, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী, তাদের জীবনধারা হচ্ছে সেখানকার মূল অনুষঙ্গ। ইকো টুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার টুরিজম, নেচার টুরিজম, কালচারাল টুরিজম, কমিউনিটি বেজ টুরিজম, ওয়াইল্ড লাইফ টুরিজম, হোম স্টেসহ নানা পর্যটন কর্মকাণ্ড, পর্যটন পণ্য এবং নতুন নতুন পর্যটন-আকর্ষণীয় স্থান চিহ্নিতকরণ, উন্নয়ন ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের প্রবাহ বৃদ্ধি করা যায়।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল। এখানকার চা-বাগান, জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দি, ঝরনা, রাতারগুল, হাকালুকি ও কানাইঘাটের সৌন্দর্য হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুকে আকৃষ্ট করে। ফলে, এখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকার নতুন খাত হিসেবে পর্যটনকে বেঁচে নিয়েছে।

সর্বশেষ বলা যে, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাতকে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে হবে। বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি নীতি-পরিকল্পনা মুখে না বলে বাস্তবায়ন করে দেখাতে হবে। তবে পর্যটন থেকে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে। এখানে কর্মসংস্থান হবে, বৈদেশিক মুদ্রাও আসবে এখান থেকে।  

মাজহারুল ইসলাম শামীম
শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ফেনী সরকারি কলেজ