কেন ভালো লাগে না?

মন প্রফুল্ল থাকলে ভালো লাগা প্রতিটি কাজই সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হয়। আমরা যখন সকালে ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের মন সজীবতায় ভরপুর থাকলেও কিছু সংখ্যক মানুষের বিকেল গড়াতে না গড়াতেই মন যেন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়। অনেক মানুষ এই ‘ভালো না লাগা’ সমস্যায় ভুগছেন।

ছোটোবেলার ‘আমার পণ’ কবিতাটি প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনে মেনে চলার চেষ্টা করে, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,/ সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’ কিন্তু সারা দিন ভালো হয়ে থাকার জন্য একটা শপথ গ্রহণ করা হলেও ‘মন ভালো না থাকার’ কারণে শপথটা যেন রক্ষা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সপ্তাহে খুব কম মানুষের যায় পুরো সময় মন প্রফুল্ল থাকে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ভালো লাগে না’ একধরনের মানসিক ব্যাধি। এতে আক্রান্ত পুরুষদের তুলনায় নারীদের সংখ্যা বেশি। এই ব্যাধি থেকে পরিত্রাণের জন্য মনোবিদ চিকিৎসকের পরামর্শ অতি জরুরি।

‘ভালো লাগে না’ বা ‘মন ভালো লাগে না’ সমস্যাটি ঘরকোণের মধ্যে পড়ে আছে। একটা জরিপ করলে দেখা যাবে যে বেকার তরুণ-তরুণী, সঙ্গীহীন শিক্ষার্থী, প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটা তরুণ-তরুণী, অবিবাহিত নারী-পুরুষ—এমন মানুষই এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে পারিবারিক অশান্তি, আর্থিক সংকট, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, শরীরের হরমোনগত সমস্যা, প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার ইত্যাদি।

বর্তমানে অফলাইনের চেয়ে অনলাইনে আসক্ত দিন দিন বেড়েই চলছে। হোক ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ। সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের জন্য মানুষ অনলাইনের কাজ ও সম্পর্ককে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ফলে যন্ত্রনির্ভর মানুষেরা আবেগহীন হয়ে পড়ছে। একটা বড় ধরনের বাস্তব আবেগীয় যোগাযোগের শূন্যস্থান হয়ে যাচ্ছে। না কারোর অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করা যাচ্ছে, না কাউকে সহানুভূতি দেখানো যাচ্ছে। সরাসরি কথাবার্তার যোগাযোগ; অর্থাৎ অফলাইনে একে অপরকে বুঝতে সক্ষম।

অনেক সময় দেখা যায়, যখন কোনো ব্যক্তির মন ভীষণ খারাপ থাকে, তখন তাঁর কলিগ বা সহপাঠীর সঙ্গে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে চান, কিন্তু বিপরীত ব্যক্তি এক–দুটি কান্নার ইমোজি দিয়ে সান্ত্বনা দেন বা কখনো ব্যস্ততার কারণে ম্যাসেজ দেখতেও পান না। ফলে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে তাঁর খুদে বার্তার উত্তর পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাঁর এই অপেক্ষা একটা সময় ‘কাছের মানুষ  ভাবতে থাকা’ মানুষটার থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

তাই এই ব্যাধি থেকে বেরিয়ে মানসিক শান্তি পেতে হলে প্রথমে অনলাইনের যন্ত্রনির্ভর সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে অফলাইনে যোগাযোগব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তারপর পছন্দের কাজগুলো দিনের মাঝামাঝি অংশে রাখতে হবে। যেমন বই পড়া, ছবি আঁকা, রান্না করা ইত্যাদি। তা ছাড়া শারীরিক ব্যায়াম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে। ‘ভালো না লাগা’ ব্যাধিকে অনেকাংশেই মন থেকে বিতাড়িত করে দেয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশের নির্মল হাওয়া মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। তাই মাঝেমধ্যে দূরে অথবা কাছে কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত। তা ছাড়া নৈতিকতার চর্চা ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাও এখানে সহায়তা করে। যেসব নারী অনিয়মিত পিরিয়ডের মতো সমস্যার কারণে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত হবে গাইনি  চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

মন ভালো না থাকলে দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেও পিছপা হয় না। আর যেসব নারী-পুরুষ অন্তর্মুখী স্বভাবের, তাঁদের পক্ষে এই ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসা দুষ্কর হয়ে পড়ে। আর তাই সবার আগে নিজেকে কাউন্সিল করে ‘মন ভালো লাগে না বা আজ আমার মন ভালো নেই’ ব্যাধি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

নাদিয়া আফরোজ
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়