পাসপোর্ট অধিদপ্তরে বদলি বাণিজ্য কেন বন্ধ হয় না?

আমি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বলছি। অত্র অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সরকারি নিয়মবহির্ভূত বদলি নামক হয়রানির জাঁতাকলে পিষ্ট। অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের একটি অসাধু চক্রের কাছে জিম্মি সারা বাংলাদেশের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। বদলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেটটি এতটাই শক্ত যে তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারে না।

প্রত্যেক জেলায় পাসপোর্ট অফিস থাকার পরেও চক্রটি কর্মচারীদের পোস্টিং দূরদূরান্তে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে দিয়ে থাকে, যাতে কর্মচারীরা এদের বদলি বাণিজ্যের ফাঁদে ধরা দেয়। যারা মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে এই সিন্ডিকেটের সাথে আপস করে শুধুমাত্র তাদের নিজ জেলা কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলায় পোস্টিং দেওয়া হয় আর যারা সিন্ডিকেটের জালে ধরা দেয় না তাদেরকে বদলি করে দেওয়া হয় এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগ।

সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন তৃতীয়  ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিজ জেলায় কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি সীমাবদ্ধ রাখার সরকারি আইন থাকার পরেও কেন কর্মচারীদের এ রূপ হয়রানি করা হয়?  কেন প্রত্যেক জেলায় পাসপোর্ট অফিস থাকার পরেও আমরা নিজ বিভাগেও পোস্টিং পাই না। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অত্র অধিদপ্তরের কর্মচারীদের  ৮০ ভাড়া বদলি নিজ নিজ বিভাগের বাইরে। এই অধিদপ্তরের দালাল সিন্ডিকেটটি পাসপোর্ট প্রত্যাশী  জনগণকে  হয়রানির পাশাপাশি কর্মচারীদের বাধ্য করে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে দুর্নীতি করতে।

আপনারা জানলে অবাক হবেন, একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর বদলিতে এরা ৪ -৫ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী যদি বদলির জন্য এত লাখ টাকা ঘুষ দেন তাহলে তাঁর অসৎ উদ্দেশ্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে? বিভাগীয় বদলি আমাদের অধিকার। আমরা আমাদের অধিকার চাই, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জেলাভিত্তিক পদায়ন/বদলি চাই।

যদি সরকারি আইন অনুযায়ী আমাদের বদলি নিজ জেলা  কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলায় দেওয়া হয় তবে আমাদের অর্ধেক খরচ বেঁচে যায়, স্ত্রী সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বাবা মার ভরণপোষণ দিয়ে মোটামুটি ভালোভাবে চলা যায়। আমাদের এই অসহায়ত্বের একমাত্র কারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক স্বার্থ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের বলি আমাদের মতো নিরীহ কর্মচারীরা।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর ২০,০০০ টাকা বেতনে সংসার চলানো খুবই কষ্টসাধ্য। তার উপর যদি আমাদের মতো সামান্য কর্মচারীকে এত দূরদূরান্তে পোস্টিং দেওয়া হয় তবে আমাদের উপর অনেক বড় অন্যায় করা হয়। কারণ আমাদের বেতনের সিংহভাগ চলে যায় বাসাভাড়া বাবদ। তার উপর সংসার খরচ, বাচ্চার পড়ার খরচ, মা–বাবার ভরণপোষণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ কর্মচারীকেই তাদের স্ত্রী-সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রাখতে হয়। নিজ জেলা থেকে এত দূরে পোস্টিং দেওয়া হয় যে, নিজ পরিবারের সাথে দেখা সাক্ষাৎ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে করে প্রতিনিয়ত আমাদের মানসিক হতাশা নিয়ে কর্মস্থলে কাজ করতে হয়। আর এই মানসিক পরিস্থিতিতে জনগণকে সুস্থ সেবা দেওয়া যায় না।

আরও পড়ুন

আমাদেরও ইচ্ছে করে নিজ পরিবার এবং সন্তানের কাছাকাছি থাকতে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরেও আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসা থেকে। আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা আছি উভয়সংকটে, যদি নিজ স্ত্রী-সন্তানকে পাশে রাখতে চাই তবে বাবা মায়ের ভরণপোষণ দিতে পারি না। অথচ বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভরণপোষণ না দেওয়া অপরাধ। তাই আমরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা নিজেদের সুখ বিসর্জন দিয়ে মা–বাবার মুখে হাসি ফোটাই। যদি সরকারি আইন অনুযায়ী আমাদের বদলি নিজ জেলা  কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলায় দেওয়া হয় তবে আমাদের অর্ধেক খরচ বেঁচে যায়, স্ত্রী সন্তানের সাথে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি বাবা মার ভরণপোষণ দিয়ে মোটামুটি ভালোভাবে চলা যায়। আমাদের এই অসহায়ত্বের একমাত্র কারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের অনৈতিক স্বার্থ। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের বলি আমাদের মতো নিরীহ কর্মচারীরা।

সরকারের কাছে আমাদের প্রাণের দাবি এ বদলি বাণিজ্য বন্ধ করুন। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচার সুযোগ চাই। বিভাগীয় বদলি আইন বাস্তবায়নে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
একজন কর্মচারী
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর