অবসাদ আত্মহত্যার পরম বন্ধু

কিছু কিছু মৃত্যু মনকে নাড়া দেয়। আসলে আস্ত একটা শরীরের ভেতর একান্ত অনুভূতির খোঁজে আমরা আত্মার সন্ধান পেতে চাই। সেই মনের কারবারই এমন যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু তার প্রভাবেই চলে সবকিছু। মনের ভারাক্রান্ত ভার লাঘব করা আর সম্ভব না হলে তখন মানুষ অজান্তেই আত্মহননের দিকে চলে যায়। আর তা মুহূর্তেই ঘটেও যায়।

জীবনে ধন, সম্পদ, যশ আর চাকচিক্যের বাড়াবাড়িও মনকে দোলা দেয় না, নাচিয়ে তোলে না কোনোমতেই। তখন একাকিত্ব কুরে কুরে খায়। দুনিয়ার বিশ্ব সুন্দর চোখের সামনে থাকলেও ভালো লাগে না। তাবৎ দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো মানুষটি অবশেষে নিজের ঘরেই সিলিং ফ্যানে ঝুলে থাকে। কী অদ্ভুত জীবন–ভাবনা মানুষের!

চোখের জল কি তাহলে এই পথে নিয়ে যায় সহজে? মোটেও নয়। অবসাদ, বিতৃষ্ণা না-পাওয়ার অলিগলিতে হারিয়ে ফেলে মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন। আঘাতের প্রকারান্তর অনেক। বাইরে থেকে সুনসান সুন্দর দেখা গেলেও ভেতরে অনেক অসুন্দর লুকিয়ে থাকে, যা হয়তো খালি চোখেও দেখা যায় না।

মরণ নিশ্চিত আছে। নিশ্বাস বন্ধ হবে, দম আটকে আসবে পরপারের যাত্রায়, তবুও যেতেই হবে। মানুষের এই চিরকালীন যাত্রা যেন শুভ হয়, শান্তির হয়, আপনজনের মধ্যে হয় এই কামনা করি।

আত্মহত্যা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যায় আর তা নেতিবাচক বেশি। আসুন, আমরা জীবনকে বুঝি, শত আঘাত ও প্রতারণায়ও যেন ভেঙে না পড়ি। প্রকৃতির ওপর বিচারের দায়–দায়িত্ব ছেড়ে দিন। মনে ক্ষোভ রাখবেন না। জীবন মানেই পাওয়া না–পাওয়ার নির্দিষ্ট সময়কাল। পৃথিবীর পথে চলতে চলতেই এসব বহমান নদীর মতো চলতে ও ঘটতে থাকবে। তাই মৃত্যুটা যেন সুন্দর হয়, তার জন্য যেটুকু সময় পাই, চলুন ভালো ও সৃজনশীল কাজে ডুবে থাকি।

জীবনে অনেক ভুল হবে, তাই বলে তা ঘেঁটে ঘেঁটে জীবন বিষিয়ে তোলার কোনো মানে নেই। দুশ্চিন্তায় মগ্ন না থেকে কিছু কিছু বিষয় সময়ের হাতেই ছেড়ে দিতে হয়।

আর জীবনে ভুল না হলে আমরা শুদ্ধতার আত্মতৃপ্তি পাব না। বুঝবই না ভুলের মাশুল কী জিনিস। তাই জীবনে সবটাই টক–ঝাল–মিষ্টি থাকতে হয়।

অবসাদকে জীবনে জায়গা দেবেন না। আত্মহত্যার পরম বন্ধু হলো অবসাদ। চলুন, নিস্তেজ নয়, সব সময় সতেজ থাকার চেষ্টা করি। যেখানে যা অপছন্দ, তা থেকে দূরে থাকি। পছন্দসই সুন্দর নিরাপদ ও অল্পে সন্তুষ্টির জীবন যাপন করাই হোক আমাদের চলার পথের নিয়ামক।

পারভীন আকতার
চট্টগ্রাম