জাতীয় পতাকা অবমাননার শেষ কোথায়

জাতীয় পতাকা দেশের সম্পদ, জাতীয় অনুভূতির নাম।

জাতীয় পতাকা একটা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক—এটা আমাদের জানা কথা। বহির্বিশ্বের যেখানেই আমরা দেশের প্রতিনিধি হয়ে যাই না কেন, সঙ্গে থাকবে লাল-সবুজের পতাকা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নির্দেশনা রয়েছে, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ অনুমোদিত হতে হবে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্ত। সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল উদীয়মান সূর্য, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক।

কয়েক দিন আগে আমি একটা কাজের প্রয়োজনে গেলাম রাজশাহী শহরের রেলগেট এলাকায়। রাজশাহীতে আসার পর থেকে অনেক দিন পর্যন্ত আমার যাওয়া হয়নি, তাই গত তিন থেকে চার মাসের ভেতরে যা ঘটে গেছে, তা অজানা। সড়ক বিভাজকে দেখতে পেলাম একটা রাজনৈতিক দলের ব্যানার। পাশে দেখতে পেলাম আয়তাকার ক্ষেত্রের মাঝে লাল সূর্য। নিয়ম অনুযায়ী, শুধু লাল-সবুজে অঙ্কিত হবে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু সেখানে দেখতে পেলাম লাল–সবুজ রঙের সঙ্গে আরও একটি রঙের মিশ্রণ। রংটি হলো সাদা। প্রথম দৃষ্টিতে মনে করেছিলাম এটা হয়তো যৌথ পতাকা। জাপান ও বাংলাদেশের। জাপান আমাদের পরম বন্ধুরাষ্ট্র। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম সেটা যৌথ পতাকা নয়। জাপানের প্রসঙ্গে কোথাও উল্লেখও নেই।

 ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর’—আমারও সেই একই অবস্থা। কিছুই বুঝতে পারলাম না। এমন মনে হলো, মাটি দুভাগ হয়ে যাক, আমি তার ভেতর ঢুকে যাই, এ লজ্জা কাকে দেখাই? কীভাবে সম্ভব এভাবে জাতীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা? দেশের জাতীয় পতাকা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সম্পদ নয়। এটা দেশের সম্পদ, জাতীয় অনুভূতির বিষয়।

‘অতি পরিচয়ে সুন্দর সম্পর্কও মলিন হয়’—শেক্‌সপিয়ারের উক্তিটি মনে পড়ল। আমরা তেল মাখতে মাখতে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছি যে আমাদের অস্তিত্বের কথা ভুলে গেছি। কীভাবে, কত উপায়ে, কাকে তেল মেখে আমি ওপরে উঠতে পারি, এ–ই হলো আমাদের চিন্তাদর্শন। আমি রাজনীতি করি না, রাজনীতির ‘র’ও বুঝি না। বাঙালি, বাংলাদেশি হিসেবে দেশে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমার এগিয়ে আসা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে ন্যূনতম নৈতিক দায়িত্ব।

মো. আশরাফুল আলম
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়