চমেক হাসপাতালে সবাই কেন টাকা নিয়ে খুশি হতে চান?

চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসালয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি সম্পূর্ণ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। যেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা, আন্তজেলা, শহর ও উপশহর থেকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের ছোটাছুটি চলছে। মূলত চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুমূর্ষু রোগীদের চমেক হাসপাতালে রেফার করে পাঠানো হয়। আর এই সাধারণ রোগীদের ঘিরে চমেক হাসপাতালে চলছে সিন্ডিকেট চক্রের রমরমা ব্যবসা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে সিন্ডিকেট চক্রের তৎপরতা যেন আকাশচুম্বী। সরেজমিনে ও অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট নিতে হয়। যার মূল্য ১০ টাকা। টিকিট নেওয়ার পরে যদি রোগী ভর্তি করতে হয়, তখন ১৫ টাকা মূল্যের টিকিট ২০ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। টিকিট নেওয়ার পর রোগীকে হুইলচেয়ারে বহন করে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলে তখন বাড়তি ১০০ টাকা এবং মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে ট্রলি যোগে ওয়ার্ডে নিতে হলে তখন বাড়তি ২০০ টাকা করে গুনতে হচ্ছে।

আবার ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি প্রবেশ করলে জনপ্রতি ২০ টাকা করে বহন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্ডে রোগীর বেড নিয়েও চলছে কারসাজি। যেখানে বাড়তি ৫০ টাকা গুনলেই মিলছে রোগীর বেড। নয়তো ওয়ার্ডের ফ্লোরে বা কোনো এক কোনায় কিংবা ওয়ার্ডের প্রবেশমুখেই ঠিকানা হচ্ছে এসব মুমূর্ষু রোগীর। এভাবেই রোগীর ভর্তিপ্রক্রিয়া শেষ হয়।

এরপর ডাক্তার আসবেন, রোগী দেখবেন। তারপর শুরু হবে পরীক্ষা। পরীক্ষার রিপোর্ট আসা পর্যন্ত স্যালাইন ও ওষুধ চলবে। রিপোর্ট আসার পর আরেক ডাক্তার আসবেন। তিনি রোগী দেখবেন, আবার অন্য পরীক্ষা দেবেন।

পরীক্ষা করাতে হুইলচেয়ারে নিয়ে গেলে ১০০ টাকা আর ট্রলিতে নেওয়া লাগলে ২০০ টাকা ওয়ার্ড বয়কে দিতে হবে। প্রতিদিন নতুন নতুন ওষুধ যোগ হবে। প্রতিদিন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে এলে ওয়ার্ডের দারোয়ানকে খুশি করতে হবে।

সব রকমের পরীক্ষা শেষ। এবার অপারেশন হবে। অপারেশন করতে ছয় হাজার থেকে সাত হাজার টাকার ওষুধ কিনে দিতে হবে, যা অফেরতযোগ্য। অপারেশনে যদি রোগী মারা যান, তখন রোগী এবং টাকা দুটোই প্রাণ হারায়। এভাবেই একজন রোগীর পরিবার নিঃশেষ হয়ে যায়।

আর অপারেশন যদি সফল হয়, তখন অপারেশন থিয়েটার বয়কে খুশি করতে হবে। দারোয়ানকে খুশি করতে হবে এবং প্রতিদিন ড্রেসিং করার ও খাওয়ার ওষুধ কিনতে হবে। এভাবে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর রোগীর রিলিজ হবে। নার্সকে খুশি করতে হবে। দারোয়ানকে খুশি করতে হবে। ওয়ার্ড বয়কে খুশি করতে হবে। সবাইকে খুশি করতে করতে ক্লান্ত দেহের শূন্য হাতে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সর্বোপরি চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি বাড়াতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বসাধারণের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসার অধিকার। আর এই অধিকারহরণের সিন্ডিকেট চক্রকে শনাক্ত করে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই সাধারণ রোগীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং চমেক হাসপাতালের সিন্ডিকেট চক্র নিপাত যাবে।

এস এম রাহমান
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ