বিপাকে পঞ্চগড়ের চা–চাষিরা

শুরুতে চা–চাষিরা সাফল্যের মুখ দেখলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে এ সাফল্যের ছোঁয়া।
ফাইল ছবি

চা বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। বাঙালির আড্ডার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ চা। উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত—সব স্তরের মানুষের সকাল–সন্ধ্যা চা ছাড়া কাটতেই চায় না যেন। চা–বাগানের কথা মনে হলেই সিলেটের মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও চট্টগ্রামের কিছু পার্বত্য এলাকার কথাই আগে মাথায় আসে। কিন্তু সমতল ভূমিতে যে চাষ হতে পারে, পঞ্চগড় তার বাস্তব উদাহরণ। এ জেলায় গড়ে উঠেছে সারি সারি চা–বাগান। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়ের উৎপাদিত চা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করেছে।

১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের হাত ধরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয় সিলেটের মালনীছড়ায়। এর প্রায় দেড় শ বছর পর ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সড়কের পাশে, উঁচু পতিত জমিতে কিংবা পুকুরপাড়ে, এমনকি বাড়ির আঙিনায়ও দেখতে পাওয়া যায় এ চা–বাগান। এসব চা–বাগান বদলে দিয়েছে বেকার শ্রমিকের ভাগ্য, তৈরি করেছে কর্মসংস্থানের। গত দুই দশকে পঞ্চগড়ের গোচারণভূমি সবুজে ভরে গেছে।

দেশের একমাত্র জেলা পঞ্চগড়, যেখানে সমতল ভূমিতে চা চাষ হয়। শুরুতে চা–চাষিরা সাফল্যের মুখ দেখলেও দিন দিন কমে যাচ্ছে এ সাফল্যের ছোঁয়া। মে, জুন, জুলাই—এই তিন মাসকে পঞ্চগড়ের চায়ের ভরা মৌসুম ধরা হয়। আর এই সময় এলেই সিন্ডিকেট করে চা–পাতার দাম খেয়ালখুশিমতো নির্ধারণ করা হয়। আর্থসামাজিক উন্নয়নে চা চাষ এখন এগিয়ে গেলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চাষিদের।

বছরের পর বছর এ সিন্ডিকেট আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্য এখন চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। হাঁপিয়ে উঠেছেন চাষিরা, কেটে ফেলছে অনেক চা–বাগান। চাষিদের অভিযোগ, কয়েক বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বাড়লেও চা–পাতার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তাঁরা। প্রতি কেজি কাঁচা চা–পাতার দাম ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কারখানার মালিকেরা কিনছেন ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে। চাষিরা ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন শ্রমিকেরা। প্রশাসনে বারবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি তাঁরা।

সমতলের চা–শিল্পে ৩০ হাজার শ্রমিক ছাড়াও রয়েছেন ৮০ হাজার ক্ষুদ্র চা–চাষি। দেশের মোট উৎপাদিত চায়ের ১৯ শতাংশই আসে পঞ্চগড় থেকে। বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ১০০ ভাগ অরগানিক চা উৎপাদিত হচ্ছে পঞ্চগড়েই। এই চা আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি পেয়েছে। কিন্তু চা–চাষিরা চা–পাতার ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন।

যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপর ভর করে দেশের অর্থনীতি চাঙা হচ্ছে, তাঁরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত সবুজ অর্থনীতির ন্যায্য মূল্য পান, সেদিকে ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। পঞ্চগড় জেলার বিপুল সম্ভাবনাময় চা–শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন কারখানার মালিক ও চা–চাষিদের যৌথভাবে কাজ করা। পাশাপাশি প্রশাসনের উচিত বিপুল এই সম্ভাবনাময় খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে চা–চাষিদের দিকে একটু নজর দেওয়া।

আইরিন হাসান
শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া