তরুণদের বিদেশ গমনের প্রবণতা কেন, সমাধান কী

শিক্ষার্থীদের বিদেশ গমনের প্রবণতা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। যার পরিমাণে এত বেশি যে বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য আবার কেউ নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে পরিবারের স্বপ্ন পূরণে সংসারের হাল ধরতে। প্রকৃতপক্ষে, এখন তরুণ প্রজন্মের একটাই স্বপ্ন—দেশত্যাগ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় দেশের মেধাশক্তি যে নিঃশেষ হয়ে যাবে তা বলা বাহুল্য। আমরা যদি এর কারণ খুঁজতে যাই তবে প্রথমেই পাব দেশের চাকরির সংকট। মেধাবীদের যোগ্যদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না।

ইউনেসকোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন ৫২ হাজার ৭৯৯ শিক্ষার্থী। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমাদের দেশে কি শিক্ষার মান খারাপ নাকি অন্য কিছু? হ্যাঁ, আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও আমলারা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নেন ইউরোপ, আমেরিকা অথবা পশ্চিমা দেশগুলো। এতেই বোঝা যায় আমাদের দেশের শিক্ষার মান ও পরিবেশের চেয়ে বিদেশের মান কতটা এগিয়ে।

অপরদিকে দেশে বেকারত্বের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশ থেকে শ্রমশক্তিও বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। আমরা যদি দেশের বেকারসংখ্যার দিকে নজর দিই তাহলে দেখা যায় ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে বেকারদের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে ২০২২ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। অর্থাৎ ২০২৩ এর মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এখানে বড় একটা অংশ বেকারের যোগ্যতার আছে কিন্তু নেই তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই দেশ ছাড়তে হচ্ছে তাদের।  

দেশের এত মেধাবী দেশ ছাড়ে তাহলে দেশকে এগিয়ে নেবে কারা? ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেবে কারা? প্রশ্ন থেকে যায়। বেকারত্ব একটি দেশের অভিশাপ। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে দেশের সকল মানুষের কিছু দায়িত্ব আছে। বেকারত্বের অভিশাপে অনেকে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছে। সেখান থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার ঘটনাও কম নয়।

একটু অন্যভাবে ভাবলেই এই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে দেশের লাখ লাখ তরুণ-যুবক। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অভূতপূর্ণ বিকাশ ঘটেছে। যার ছোঁয়া আমাদের দেশেও লেগেছে। এই প্রযুক্তিগত শিক্ষা হতে পারে বেকারত্বের করালগ্রাস থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মের আওতায় আনা যায়। যদিও বাংলাদেশের যুব অধিদপ্তর ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা নানারকম প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা প্রদান করছে। যার মাধ্যমে অধিকাংশ মানুষ কর্মসংস্থানের ধারণা পাচ্ছে। তবে সরকারিভাবে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় যদি বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে দেশের অধিকাংশ বেকার চাকরির আওতায় আসতে পারবে।

আমাদের দেশে বর্তমানে শিক্ষার উদ্দেশ্য চাকরি প্রতি প্রলোভন। তাই একদিকে যেমন শিক্ষার হার বাড়ছে তেমনি বেকারত্বের হারও বাড়ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো শিক্ষাকে শুধু চাকরির উদ্দেশ্যে নয় বরং জীবনের অন্য কলাকৌশলের জন্যও ব্যবহার করে। এখন কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ও গুরুত্বারোপ প্রয়োজন। কেননা কারিগরি শিক্ষাই পারে জনগণকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে।

বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার বিপরীতমুখী। যেমন দেখা যায়, কেউ অ্যাকাউন্টিং পড়ে ব্যাংকে চাকরি করছে আবার কেউ পদার্থবিজ্ঞান পড়েও ব্যাংকে চাকরি করছে। ফলে ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটছে। এমন পরিস্থিতি পরিবর্তন করা তাই এখন সময়ের দাবি। কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে তরুণসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে কেননা কর্মমুখী শিক্ষা বেকারত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী কর্মক্ষেত্র বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। এগুলো বেকার জীবন থেকে মুক্তির হাতিয়ার হতে পারে। পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে বেকার সমস্যা ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশের বিরাজমান এসব বেকার সমস্যার সমাধান সময়সাপেক্ষ বিষয়। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার এবং ভবিষ্যৎ বেকারত্ব প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন মানব উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। বেকার সমস্যার বিস্তৃতি ও ব্যাপকতার প্রেক্ষাপটে শুধু অর্থনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করলেই বেকারত্ব কমবে না। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রত্যক্ষভাবে লক্ষ্যমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

সারওয়ার রনি
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।