খাবার অপচয়: যাহা বিলাসিতা, তাহা অনেকের কাছে স্বপ্ন!

খাবার, যা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। এ অসম্ভবকে সম্ভব করতেই মানুষ ছুটছেন দূরদূরান্তে। সংগ্রাম করছেন দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে। অথচ এ খাবার অনেকের কাছে বিলাসিতা আবার অনেকের কাছে তা যেন স্বপ্ন।

যেখানে খাবারের থালায় দুমুঠো ভাতের জন্য মানুষ হাহাকার করে জীবন পার করছেন, সেখানে সেই একই খাবার ডাস্টবিনে স্তূপ গড়ছেন। কতই না বাস্তবতার সমীকরণ! কী আজব, কী নির্মম! একদিকে খাবার অপচয়ের উৎসব হয়, অন্যদিকে ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থেকে মৃত্যুর প্রহর গোনেন। আমরা বড়ই হতভাগা। আমরা আজকাল এতই আধুনিক হয়ে গেছি যে মাছ-মাংসের গন্ধ নাকে না এলে আমরা খেতেই বসি না। খেতে গিয়ে খাবার থালায় সাজিয়ে নিই যত ভালো ভালো খাবার। পরে পেট পুরে খেয়েও থেকে যায় আরও দু–একজনের খাবার। পরে এগুলো দূর করে ঠেলে দিই ময়লার ঝুড়ি কিংবা ডাস্টবিনে। আর ওই দিকে খেতে না পেরে বস্তিতে মায়ের কোলে বসে শিশুটি ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করে কাঁদে।

কোথায় নেই এই অপচয়? যেদিকেই চোখ যায়, সেদিকেই দেখি কেবল খাবারের অপচয়। বিয়ের অনুষ্ঠান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পার্টি, ছাত্রাবাস, সাধারণ বাড়িঘরসহ এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে খাবার নষ্ট হচ্ছে না। ডাস্টবিনগুলোর একটা বিশেষ অংশ পূর্ণ হচ্ছে নষ্ট-পচা খাবার দিয়ে। অথচ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ৮১ কোটি ১০ লাখ মানুষ প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যান।

একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাব যে খাবার অপচয়ের অন্যতম কারণগুলো হলো প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে তা ব্যবহার না করতে পারা ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে না পারা। আবার এ অপচয়ের তালিকাও যেন খুব দীর্ঘ সারির। যাতে করে দেশে বছরে আনুমানিক এক কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়। বছরে মাথাপিছু ৬৫ কেজি খাবার কখনো খাওয়া হয় না। যে পরিমাণ খাবার অপচয় হয়, তার ৬১ শতাংশ হয় বাড়িতে পরিবারগুলো থেকে, ২৬ শতাংশ রেস্তোরাঁ থেকে এবং বাকি খাবার অপচয় হয় খাদ্যশস্য বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান, সুপারশপ, দোকান ও বাজার থেকে।

রেস্টুরেন্ট ও বিয়েবাড়িতে প্রত্যেক কাস্টমার ও অতিথিকে পরিবেশিত খাদ্যের সঙ্গে একটা এক্সট্রা প্লেট দেওয়া যেতে পারে। যা খেতে পারবেন, তা খাবেন নয়তো বাকি খাবার ওই প্লেটেই রাখবেন। পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় তা সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু ও গরিবদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে খাবার অপচয় কিছুটা রোধ হবে, অন্যদিকে বিত্তশালী ও সামর্থ্যবানদের খাদ্যে গরিব-অসহায়দের শরিক করার সুযোগ হবে। যা নিশ্চিত সম্প্রীতি ও শান্তির পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। আর অনাহারী, পথশিশু থেকে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ পেট পুরে খেয়ে হাসবে আপন হাসিতে।

তৌহিদ-উল বারী
শিক্ষার্থী
বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম