এই যে স্যার, আপনাদের বলছি, একটু শুনবেন কি?

স্যার, এই যে আপনারা যাঁরা ব্যবসা করছেন, কলকারখানা চালাচ্ছেন, বলার অপেক্ষা রাখে না আমাদের এই উন্নয়নে আপনাদের অবদান কতটুকু। এ জন্য আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে কিছু অনুরোধ করছি।

এই দেখুন না স্যার, ঢাকার ফুটপাতেও আজ কত লোক ঘুমাচ্ছে, জীবিকার প্রয়োজনে কত মানুষ বসবাস করছেন। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো কী জানেন স্যার, ঢাকার বাতাসে নিশ্বাস নেওয়াও নাকি বিপজ্জনক। সেখানে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো স্কুলে যাচ্ছে আপনাদের ফিটনেসবিহীন গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের নিশ্বাস নিতে নিতে। দিনশেষে কমবেশি আপনার ছেলেমেয়েও এর শিকার হচ্ছে। কিন্তু স্যার, আপনার সন্তানের কিছু হলে আপনি তো বিদেশে নিয়ে গিয়েও চিকিৎসা করাতে পারবেন। আপনারা তো পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমরা যারা এই দূষিত বাতাসে বড় হচ্ছি, আমাদের দায়িত্ব কে নেবেন স্যার? এই পথশিশুগুলোর দায় কে নেবেন? না, স্যার ভুল বুঝবেন না। আপনাকে বলছি না, এই পথের শিশুকে আপনার বাড়িতে আশ্রয় দেন, বলছি তাদের স্থানে তারাই থাক, শুধু আপনারা আপনাদের কারখানাকে যতটা সম্ভব দূষণমুক্তভাবে চালান। স্যার, আমরাও তো আপনার দেশেরই নাগরিক, আমাদের প্রতি এতটুকু মায়া করুন।

স্যার, আপনার প্রতিষ্ঠানের অপরিশোধিত বর্জ্য পরিশোধন না করেই আপনি নদীতে ফেলছেন। আপনি ভাবছেন, শুধু শুধু টাকা খরচ করে কী হবে, যেখানে ফ্রি করা যায়। আর নদীর কূলে তো আমার বাড়ি নয়, আমার কী হবে?

ওই নদীর কূলেই হয়তো আপনার মতো কেউ থাকেন। আপনার বর্জ্য নদীকে দূষিত করছে, নাব্যতা কমিয়ে বন্যার সৃষ্টি করছে। গত বছর সিলেটের বন্যা দেখেছেন তো স্যার? বয়স্ক মানুষ, নারী ও শিশুরা কতটা অসহায়ভাবে তাকিয়ে ছিল। আপনি কি পারতেন স্যার আপনার বাচ্চাকে এভাবে দেখতে, পারতেন না স্যার? স্যার, মুনাফা না হয় একটু কমই হলো, তবুও তো কারও জীবন বাঁচল। আসুন না স্যার, অপরিশোধিত বর্জ্য নদী–খালে না ফেলে আইন ও নিয়ম অনুসরণ করি। নিজ স্বার্থকে বড় করে না দেখে, আমাদের স্বার্থকে বড় করে দেখি।

স্যার, এসবের সব দোষ আপনাদের দিচ্ছি না। মানছি, আমাদেরও দায় আছে। তবে এখানে আপনাদের কারণেই বড় প্রভাব পড়ে। আমরা চেষ্টা করছি শুধরে নেওয়ার, আপনারাও চেষ্টা করুন স্যার।

স্যার, সামনেই রমজান মাস। শুরু হয়ে যাবে আপনাদের চিরপরিচিত সিন্ডিকেট ব্যবসা। কাদের জন্য সিন্ডিকেট করবেন স্যার? দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে, সাধারণ মানুষ কিনতে পারবেন না। একটা কথা জানেন কি স্যার, এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে কারও বিনোদনে, কারও পেটেভাতে। আমি নিশ্চিত স্যার, আপনাদের এই সিন্ডিকেটের কারণে আপনার মতো আরও ব্যবসায়ীরা হয়তো না খেয়ে থাকবেন না। কিন্তু স্যার, এখনো অনেক দরিদ্র পরিবার আছে, যারা এই মাসে স্বাচ্ছন্দ্য ও দুশ্চিন্তামুক্তভাবে কাটাতে চায়। কিন্তু হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধি তাদের নাগালের বাইরে চলে যায়। আমি বলছি না স্যার ফ্রি দেন, তারা কিনেই নিবে আপনারা শুধু সিন্ডিকেট বন্ধ করুন।

সঙ্গে উচ্চ শ্রেণির কর্মকর্তাদেরও বলি, স্যার আজ পত্রিকা খুললে দেখি, আমাদের এতটুকু ভূখণ্ড বিশ্বের বুকে দুর্নীতির শীর্ষ কাতারে আছে। গ্রামের মুটেমজুর, কৃষক তো আর মানি লন্ডারিং বুঝেন না স্যার। তাহলে আমার দেশের টাকা কারা পাচার করছেন স্যার? স্যার, দেশের অনেক মানুষ প্রবাসে মানবেতর জীবন যাপন করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, আর এক শ্রেণির লোক ডলার পাচার করছেন। তাঁরা বিদেশে গিয়েও কাজ শেষে দেশে চলে আসছেন, আর আমরা কাজ শেষে টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছি, ব্যাপারটা কেমন না স্যার?

এত টাকা পাচার না করে দেশে থাকলে এই ৫০ বছরে আমাদের অবস্থান কোথায় থাকত, ভেবে দেখেছেন স্যার?

আপনারা বিজ্ঞজন। উপদেশ দিচ্ছি না। পরামর্শও দিচ্ছি না। আপনাদের শুধু অনুরোধ করছি, আমাদের জন্য একটা সুন্দর দেশ রেখে যান।

মোহাম্মদ নাসিম মোল্লা
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়