বাংলা নববর্ষ: বাঙালির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা

দেখতে দেখতে পুরোনো বর্ষ শেষে হাতছানি দিচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩১। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের এক তারিখে বাংলা সাল নতুন বর্ষে পদার্পণ করে, তাই এর নাম বাংলা নববর্ষ। সম্রাট আকবরের হাত ধরে ধাবমান আমাদের এই বাংলা সাল ছুটে চলেছে তার অসীম গন্তব্যে। উৎপত্তির দিন থেকে আজ অবধি এ দেশে ক্রমান্বয়ে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উৎসব আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে।

এ যেন এক নতুন আমেজ, নতুন শক্তি, নতুন পথচলা। বিগত বছরগুলোর সব গ্লানি মুছে নতুন উদ্দীপনায় এগিয়ে চলে বাঙালি জাতি। সূর্যের মতো বাংলা নববর্ষ আমাদের তার বাহারি আলোয় আলোকিত করে, আলোকিত করে পৃথিবীকে। নানা রকম পিঠা আর আলপনায় সুসজ্জিত হয় গ্রাম ও শহরগুলো। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে বাঙালি। পান্তা-ইলিশ পরিবেশনা যেন নববর্ষে অন্য আমেজের সৃষ্টি করে।

‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুঁচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পঙ্‌ক্তির মতো এই দিনে সবাই সব গ্লানি ভুলে গিয়ে একত্র হয় নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এবং মানুষদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে সবাই নতুন জামাকাপড় পরে বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যায় এবং ‘শুভ নববর্ষ’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। সেখানে বাহারি খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। ব্যবসায়ীরা এদিন হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সারা বছরের সব দেনা-পাওনা শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলা হয়। পয়লা বৈশাখে আয়োজিত বিভিন্ন গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কথা না বললেই নয়। আয়োজিত খেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘোড়দৌড়, নৌকাবাইচ, হাঁড়ি ভাঙা ইত্যাদি। দিনটিকে স্মরণীয় রাখতে গ্রামের অনেক বাড়িকে আলপনায় সুসজ্জিত করে রাখা হয়। দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ নববর্ষে নতুন এক মাত্রা যোগ করে।

এদিকে নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে গ্রাম্য মেলা। শহরেও বিভিন্ন সংগঠন ছোট–বড় মেলার আয়োজন করে থাকে। শিশু থেকে কিশোর, যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাই এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। রংবেরঙের পাঞ্জাবি–পায়জামা, শাড়ি, রেশমি চুরি পরিধান করে বের হতে দেখা যায় মানুষদের, যা বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটিয়ে সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে। একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ, শ্রদ্ধা ও ঐক্যের অসাধারণ মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।

রমনা বটমূলে পালিত হয় বিভিন্ন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান যেখানে দেশের গুণী শিল্পীরা তাঁদের পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। তারপর বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। সবার মুখে একই প্রতিধ্বনি, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...’। বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে দিনটিকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করে। সবার সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের এই রঙিন নববর্ষ।

  • ওমর ফারুক ইমন
    শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়