একজন ছাত্রের প্রথম নায়ক তার শিক্ষক। শিক্ষক তার সুনিপুণ কারিগরি দক্ষতা দিয়ে চক্ষু আড়ালে দেশ গঠন করেন, গড়ে তোলেন জ্ঞানের সাম্রাজ্য। একজন আদর্শ শিক্ষক ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-নির্বিশেষে সবার কাছেই শ্রদ্ধেয়। কিন্তু আজও কি সুখে আছে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় কারিগররা!
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় উনপঞ্চাশ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল আছে, যা গত দুই বছরের তুলনায় ত্রিশ শতাংশ কম। আর এখানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সংখ্যাও বিপুল। সাধারণত শিক্ষকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির উপর। তাই অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক পড়ান নামমাত্র বেতনে। তাদের বেতন নিয়ে নেই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শিক্ষকদের বেতন নিয়ে যেই তালবাহানা তা যেন মানা যায় না। সামান্য বেতনে সংসার চালাতেই যেন শিক্ষকদের দম ফুরিয়ে যায়। তার উপর যদি আসে পরিবারের কেউ অসুস্থের খবর, তাহলে যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তেমনি একজন শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন (৫০)। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর কাশেম নাদিরা জুনিয়র হাই স্কুলে দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ সুনামের সাথে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত আছেন। এলাকায় একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি সবার কাছে।
গত ১৪ আগস্ট সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পা পিছলে পড়ে পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থানে সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কারণে তার বাম পাটি কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সে অনুযায়ী রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে পা কেটে ফেলা হয় এবং পরবর্তী চিকিৎসার জন্য সেখানেই রাখা হয়। এতে করে তার পরবর্তী জীবন কীভাবে কাটবে, তা পুরোটাই যেন অনিশ্চিত।
একজন শিক্ষক হিসেবে যতটুকু পাওয়ার কথা জাতির কাছে, তা একজন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক হওয়ার কারণে শূন্য, নেই কোনো দায়বদ্ধতা, নেই কোনো নিশ্চয়তা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও কোনো রকম সহযোগিতার আশ্বাস নেই। অন্যদিকে, একজন সরকারি প্রাথমিক/ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে তাঁর নিয়মিত মাসিক বেতন-ভাতা হতো, চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাও হতো। সরকারি শিক্ষক না হওয়ায় তাঁর জন্য পেনশনের সুবিধাও নেই। অর্থাৎ বৈষম্য শুরু হলো মানুষ গড়ার কারিগর থেকেই।
নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই বলেছিলেন, একটি বই, একটি কলম, একটি শিশু ও একজন শিক্ষক বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেয়। সত্যিই একজন শিক্ষক চাইলেই গোটা বিশ্বকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন। তবে বিশ্ব পরিবর্তন করতে চাইলে শিক্ষক-শিক্ষকের মধ্যে যে বৈষম্য সেটা আগে পরিবর্তন করা দরকার। পাশাপাশি শিক্ষার মান ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাইলে শিক্ষকদের সময়-উপযোগী প্রশিক্ষণ ও তাদের সর্বাধিক মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা প্রয়োজন।
রাব্বি মাদবর
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ