জীবনে সহ্যশক্তিই সমাধান, আত্মহত্যা কখনো সমাধান নয়

জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে অর্থাৎ জন্ম যার হয়েছে মৃত্যু তার অবধারিত। যার প্রাণ আছে তার মৃত্যুও আছে, নিঃসন্দেহে মেনে নিতে হবে। কবির ভাষায়, মৃত্যু অমোঘ সত্য জেনেও মানুষ পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ছেড়ে যেতে চায় না। কিন্তু কিছুই করার নেই। কারণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কেউ মৃত্যু নামক শব্দের বাস্তবতা থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তবে বর্তমান সময়ে মৃত্যুর কাছ থেকে নিজে না লুকিয়ে, রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ত্যাগ করে, মৃত্যুর থেকে বাঁচার দাবি না করে, নিজেই নিজের প্রাণনাশের কারণ হচ্ছে একদল মানুষ। তারা তাদের বাস্তবিক সমস্যাগুলোর একমাত্র সমাধান দেহ থেকে আত্মা বের করে অজানা দেশে চলে যাওয়াই জীবিত মানুষকে বুঝিয়ে যাচ্ছে।

আসলেই কি আত্মহত্যা সবকিছুর সমাধান? অবশ্যই না। সমস্যা থেকে পালিয়ে যেমন সমাধান হয় না, তেমনি আত্মহত্যা সমস্যার সমাধান হয় না। জীবনে সহ্যশক্তি যার যত বেশি, আত্মহত্যা নামক ভূত এড়ানোর শক্তি তার তত বেশি। তাই সহ্যশক্তিটা খুবই প্রয়োজন মনে করি। ব্যর্থতার আড়ালে সফলতা, অন্ধকারের পর আলো, রাতের পর দিন, তেমনিভাবে দুঃখের পর সুখ ও সুখের পর দুঃখ থাকবেই। জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কেউ খুশি থাকতে পারে না। আর এটাই জীবনের চরম নিয়ম। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, লাইফ ইজ স্ট্রাগল অর্থাৎ জীবন মানেই সংগ্রাম। আপনি চিন্তা করছেন, আপনার নাশ হলেই আপনার সমস্যার সমাধান। কিন্তু নিজের হত্যা নিজে করার আগে চিন্তা করে দেখেন, আপনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন, আপনার মা-বাবা ও পরিবারের মানসিক সুখও না ফেরার দেশে চলে যাবে।

আপনি আপনার পরিবারের সামনে শুধু বেঁচে থাকাটাই পরিবারের শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা। এমনকি পরিবারের সামনে পঙ্গু হয়ে বেঁচে থাকাটিও পরিবারের মূল উদ্দীপনা। হ্যাঁ, সেটা সত্য একটা মানুষ পঙ্গু থাকা মানে পরিবারের একটা মানুষ বেকার থাকা। আর বেকার মানুষের জন্য একটু আলাদা কষ্ট স্বীকার করতেই হবে। তবে আপনি আছেন, আপনি কিছু করেন আর নাই করেন আত্মাযুক্ত আপনার সারে তিন হাত শরীর পরিবারের মনোবল হবেই। তাছাড়া প্রত্যেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে, দেশে তরুণ-তরুণীদের মাঝে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে। খুব সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী শিক্ষার্থী সমস্যার সমাধান হিসেবে আত্মহত্যা বেছে নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সমাজের অন্য মানুষদের ইতিবাচক দিক বোধগম্য করানো যাদের কাজ ছিল তারাই নেতিবাচক কাজ করলেন। আপনারা নিশ্চয়ই আঁচল ফাউন্ডেশন নাম শুনে থাকবেন। আঁচল ফাউন্ডেশন সকল হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২ সালে দেশে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ৮৬ জন।

জীবনে এমন অনেক সময় আসবে যখন আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন। তখন কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। মনে হবে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী হয়ে আছেন। এই রকম অবস্থায় নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না যেটা আপনার নিজের ক্ষতি করবে। প্রকৃতপক্ষে, এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর কিন্তু আমাদের হাতে সময় খুব কম। আপনি খুব ভাগ্যবান কারণ আপনি পৃথিবীতে জন্মেছেন। অবশ্যই সবার একটা কথা মনে রাখা উচিত, চাওয়া-পাওয়ার আশা না করে মন থেকে উপভোগ করতে পারলে ‘লাইফ ইজ ভেরি বিউটিফুল’। পরিশেষে, সবার কাছে বিনীত অনুরোধ আসুন আমরা জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার জন্য সহ্যশক্তি বৃদ্ধি করি, আমরা যেকোনো পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলি, নিজের উপর বিশ্বাস রাখি, আমরা জীবনকে ভালোবাসি, আমরা  ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করি, আমরা আত্মহত্যাকে না বলি, নীতি ধর্ম মেনে চলি, তাহলেই আত্মহত্যা নামক মহাপাপ থেকে আমরা মুক্ত হব।

সুমন চৌধুরী
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।