ফেসবুক যাতে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে

বর্তমান সময়ে যতগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে ফেসবুক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। শুরুতে ফেসবুক মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে ফেসবুকে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ফিচার, যেমন মানিটাইজেশন, স্টার, রিলস ইত্যাদি। যা এর ব্যবহারকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। আর এসব নতুন নতুন ফিচারের ভেল্কিবাজিতে ফেসবুক এখন অনেকটা আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। এতে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা ফেসবুক নামক ‘মাদকে’ এতটাই আসক্ত হয়েছে যে তারা এখন আর ভালো মানের কোনো বই পড়ছে না, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে না, পরিবারের সাথে সময় দিচ্ছে না, প্রকৃতির নির্মলতাকে উপভোগ করছে না। অনেকে ‘ফেইক’ মানুষদের সাথে ভার্চুয়াল সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে।

ফেসবুকের যে এলগরিদম তাতে একজন ব্যবহারকারী যদি ফেসবুকে সময় কম দেয় তাহলে তার রিচ কমিয়ে দেয়া হয় এবং এর ফলে ব্যবহারকারীর লাইক, কমেন্ট অর্থাৎ এঙ্গেজমেন্ট কমতে থাকে। যেহেতু ইউজার -এঙ্গেজমেন্ট বেশি হলে মানিটাইজেশন ও স্টার গিফ্ট পাবার লেভেল অর্জন করতে সহজ হয়, তাই এই এঙ্গেজমেন্টের আশায় তরুণরা সারাদিন ফোনের স্ক্রিনে উপর উবু হয়ে থাকে। এতে করে তাদের চোখের ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে আবার টাকা কামানোর ধান্ধায় আজেবাজে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ভিডিও বানিয়ে শেয়ার করছে, যা সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ঠ করছে।

ফেসবুককে আমরা না বুঝে না জেনে মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, কন্টাক্ট পড়ার পারমিশন দিয়ে দিচ্ছি। এতে করে ফেসবুক আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, সুখ-দুঃখ,লক্ষ্য-উদ্যেশ্যের মত ব্যক্তিগত গোপন বিষগুলোতে গোপনে নজরদারি করছে। যেমন কেউ যদি তার কোনো বন্ধুর সাথে ফোনকলে বা মেসেঞ্জারে জলপাইয়ের আচার নিয়ে কথা বলে তাহলে দেখা যাচ্ছে সেই ব্যক্তির ফেসবুক ওয়ালে জলপায় আচারের বিজ্ঞাপন চলে আসছে। বিষয়টা হয়তো কারো কাছে আহামরি কোনো কিছু মনে হচ্ছে না। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন ফেসবুকের এই ‘গোয়েন্দাবৃত্তি’ যদি কোনো রাষ্ট্রের সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতিকে লক্ষ্যবস্তু বানায় তাহলে কতটা ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
তাহলে এখানে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে ফেসবুক একটি ‘মরণফাঁদ’।

ফেসবুক চায় আমরা তাকে সারাদিন ব্যবহার করি। এই ফাঁদে পড়েই আমরা আমাদের মহামূল্যবান কর্মঘণ্টা ডোবার জল সেচতে ব্যয় করছি। এতে ফেসবুক তার উদ্দেশ্য ঠিকই বাস্তবায়ন করছে কিন্তু আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও ভাষার ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা সেটা বুঝতে পারছি না। ফলে ফেসবুক ব্যবহার করতে হবে খুবই সতর্কভাবে। তরুণদের বুঝতে হবে তারা দেশের এক অমূল্য সম্পদ এবং তাদের সময়গুলো আরো বেশি অমূল্য সম্পদ। তাই এই সময়টা ফেসবুকে অপচয় না করে ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। ভালো বই পড়ার অভ্যাস করতে হবে, ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে সময় কাটাতে হবে, উপভোগ করতে হবে প্রকৃতির নির্মলতাকে এবং ফেসবুকে যেন কেউ আসক্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মো. শেখ ফরিদ
শিক্ষার্থী
ইতিহাস বিভাগ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা