কালো জাদুর বলি যখন ডাহুক পাখি

তিন-চার দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) একটা মৃত ডাহুক পাখির মর্মান্তিক ছবি নেটিজনদের নজর কেড়েছে। ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর কাজে পাখিটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। একটা বোতলে বেশ কিছু তাবিজ-কবচ ভরে, পাখিটার বুক বরাবর কেটে সেখানে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। পাখিটার মাথায় একটা তাবিজ বেঁধে তারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিষয়টা সত্যিই পীড়াদায়ক।

ছবিটা ফ্রেমবন্দী করা হয়েছে পাবনা জেলার ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠ সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে। ফেসবুকের ইমাজিনেশন নামে একটি পেইজ থেকে এ ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে।

ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুচর্চা হয়ে আসছে আদিকাল থেকেই। কালো জাদু বলতে বোঝায়, শয়তান বা অতিপ্রাকৃতিক কিছুর সন্তুষ্টির মাধ্যমে কারও অনিষ্ট করা, কাউকে বিপদে ফেলানো, ব্যক্তির উদ্দেশ্য হাসিল করা। অঞ্চলভেদে এই চর্চার বিভিন্ন নাম। যেমন ভুডু (voodoo), তন্ত্রমন্ত্র, কুফরি কালাম, বাণ মারা ইত্যাদি। আব্রাহামিক ধর্মবিশ্বাস মতে, জাদুটোনা বা বাণ মারা সত্যি মানুষের ক্ষতি করতে পারে এবং মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে বা কোনো আরাধ্য জিনিস এনে দিতে পারে।

কালো জাদুর কাজে ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন বস্তু বা প্রাণী। যেমন: পাখি, মাছ, ছাগল, পুতুল, মূর্তি। যাকে লক্ষ্য করে কালো জাদু করা হয়, তার ব্যবহৃত পোশাকের অংশ, নখ, চুলসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন তাবিজ-কবচ কাক, প্যাঁচা, ডাহুক-জাতীয় পাখি বা মাছের শরীরের ভেতর ভরে কার্যসিদ্ধ করা হয়। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে, এই তাবিজ-কবচ পুড়িয়ে ফেলা বা লেখা-জাতীয় জিনিস পানিতে ভিজিয়ে মুছে ফেলা। আমাদের আশপাশে থাকলেও অনেকে ভয়ে এগুলো স্পর্শ করতে চায় না। কিন্তু ভয়ের কিছু নেই, এমন কিছু দেখলে যথাসম্ভব নষ্ট করে ফেলতে হবে।

এভাবে বিভিন্ন প্রাণীকে অমানবিকভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা নিঃসন্দেহে একটা গর্হিত কাজ এবং অপরাধ। ডাহুক পাখির এই প্রজাতি বিশ্বে বিপন্ন তালিকায় আছে। বাংলাদেশে এই পাখি আগের তুলনায় এখন কম দেখা যায়। জলাশয় কমে যাওয়া, বিভিন্ন অসাধু মানুষ এবং পাখিশিকারিদের দৌরাত্ম্যের ফলে ডাহুক ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইন ২০১২-তে ৫৮৭টি পাখির প্রজাতির মধ্যে এই পাখি সংরক্ষিত। এবং এই আইন অমান্য করলে আইনের ৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, ‘অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ (এক) লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

এ রকম অমানবিক, পাশবিক কাজ আশপাশে যারা করে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। তার পাশাপাশি আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজেদের চারপাশে তান্ত্রিক, কবিরাজ এবং সন্দেহজনক মানুষের ওপর নজর রাখতে হবে। কোনো অপরাধ সংঘটিত হতে দেখলে যেন সঙ্গে সঙ্গেই ধরিয়ে দেওয়া যায়।

তাহফিম হাসান মেহেদী
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল: [email protected]