অটুট থাকুক সত্য ভাষণ

তখন আমাদের গ্রামটা ছিল পুরোদস্তুর ছোট্ট সাজানো সবুজ গ্রাম। শহুরে ডিশ কিংবা খবরের তোড়জোড় তখনো তেমন আলোড়ন শুরু করেনি। সকালটা তখন সকালেরও আগে হতো আর সন্ধ্যা নামতেই গভীর রাত!

আমাদের পাড়ায় তখনো বই পড়ার কিংবা বাসায় পেপার রাখার চল গড়ে ওঠেনি। বই পড়ার দারুণ জায়গা ছিল বাজারের নতুন বইয়ের দোকানটা। বই কেনার অজুহাতে ছুটির দিনে গিয়ে বই দেখতাম আর এক পাতা দুপাতা পড়তাম। কী অদ্ভুত নেশা হয়ে যেতো! পুরো সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতাম শুক্রবার এল বলে!

এরই মধ্যে পাড়ার সিনিয়র বড় ভাই একটা পত্রিকা নিয়ে আসল। সাধারণত পত্রিকা বলতে দেখে এসেছি খবরে ঠাসা কিছু কাগজ। কিন্তু এইটা তেমন না, দারুণ রঙিন কালিতে লেখা নাম—প্রথম আলো। প্রথম পাতার উপরের কর্নারে ছবিযুক্ত বিশেষ খবর। শিশির ভট্টাচার্যের দারুণ একটা কার্টুন, সাথে লেখা।

প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার মতন বিষয়! দুজন মিলে পরিকল্পনা করলাম শুক্রবারের প্রথম আলো শেয়ার করে কিনব। উনি খেলার পাতা আর আমি বাকিটা রাখব। আমাদের সময়ে টাকা পয়সা ছোটদের হাতে আসত না। তাছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বাড়তি টাকা তো দুরস্ত, দরকারি টাকা হাতে পাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। তারপরও চার টাকা আমি আর চার টাকা বড় ভাই মিলিয়ে সাত আট টাকা জোগাড় হলেই শুক্রবার সকালে অপেক্ষা করতাম মোড়ের রাস্তায় পত্রিকার হকার কখন আসবে।

প্রথম আলো আমার নাগালে আসত এগারোটা বা সাড়ে এগারোটা নাগাদ। কোনো কারণে মিস হলে ভীষণ মন খারাপ হতো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাটা অপেক্ষা করতাম শুক্রবারের সকালটা আসার জন্য, আর প্রথম আলো হাতে আসতেই কী দারুণ এক আনন্দ এসে ভর করত তা বর্ণনাতীত।

দারুণ দারুণ সব তথ্য থাকত শুক্রবারের আলাদা ফিচারে। মজার মজার তথ্যগুলোর পেপার কাটিং জমিয়েছিলাম দীর্ঘদিন। একটা সময় পড়াশোনার জন্য চট্টগ্রাম শহরে আসি। তখন নিয়মিত প্রথম আলো পড়া শুরু হয়। তত দিনে দারুণ সময় কাটে সোমবারের আলপিন, শনিবারের ছুটির দিনে আর শুক্রবারের সাহিত্য সাময়িকী’র প্রেমে পড়ে। আমার মায়ের পছন্দ ছিল নকশা। আহা আনন্দে মজে থাকা সেই সব দিনগুলো!

আমার কৈশোরের দুরন্ত দিনগুলো রঙিন করার জন্য ধন্যবাদ প্রিয় প্রথম আলো। একজন অজোপাড়ার দুরন্ত ছেলেকে স্বপ্ন দেখানোর জন্য ধন্যবাদ ।

পঁচিশকে স্বাগতম জানিয়ে শুভেচ্ছা আর শুভকামনা অনাগত অগুনতি সামনের দিনগুলোর জন্য।

সুমন চ্যাটার্জী

শিক্ষক (গণিত)

গভ. মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম