জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ঝরে পড়ছে ফুলের কুঁড়িরা

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ—এই উক্তিটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু এটিকে বাস্তবিক জীবন আমরা কতটা গুরুত্ব দিই। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, যার প্রভাব ইতিমধ্যে বিশ্বের প্রতিটি দেশে দৃশ্যমান। আর এ ভয়ানক সমস্যার অন্যতম শিকার হচ্ছে শিশুরা। বিশেষত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের শিশুদের জন্য আতঙ্ক হয়ে এসেছে এই জলবায়ু পরিবর্তন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন আঘাত হানে তখন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সপরিবারে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করে। আর এই সময় দুর্যোগের স্থায়ীত্বকাল অনুযায়ী পুরোটা সময় জুড়ে স্থগিত হয়ে থাকে শিশুদের লেখাপড়া। তাছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, অপুষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় শিশুরা। তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে সকল রোগ ব্যাধি উদ্‌ঘাটিত হচ্ছে তার ৮৫ শতাংশেই আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। পাশাপাশি দুর্যোগে ঘর-বাড়ি, আত্মীয়-স্বজনদের হারানোর ফলে তীব্র মানসিক চাপ দেখা দেয় শিশুদের মাঝে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে চরমভাবে প্রভাবিত করে। এভাবে কিছুদিন পর পর বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে শিশুদের লেখাপড়া, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যেহেতু এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের লেখাপড়ার নির্দিষ্ট গতি বা নিশ্চয়তা থাকে না তাই অনেক অভিভাবক শিশুদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেন, অল্প বয়সে আয় রোজগারের আশায় শিশুদের পাঠিয়ে দেন শহরাঞ্চলের বিভিন্ন শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস ইত্যাদি কর্মস্থলে।

তথ্যমতে, শহরাঞ্চলের বিভিন্ন কর্মস্থলে কাজ করা শিশুদের অধিকাংশই আসে বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা ইত্যাদি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে। পরিবার-পরিজন ছেড়ে শহরে কাজ করতে আসা এই সকল শিশুরা বেড়ে উঠে বস্তিতে, যেখানে দারিদ্র্যের কারণে দুষ্টুচক্রে জড়িত হয়ে পড়ে অনেক শিশু। এভাবেই জলবায়ু পরিবর্তন যতটা প্রকৃতিতে আঘাত হানে তার থেকে বেশি আঘাতে হানে একটি শিশুর জীবনে, তছনছ করে দেয় তার শৈশব-কৈশোর। তাই সময় এখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা, সবুজ পরিবহনের প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়ানো। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আঘাত হানা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় শিশুদের যেন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। বিশেষত উপকূল অঞ্চলে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে তখন শিশুদের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় কোনো শিশু যেন লেখাপড়া থেকে ঝরে না যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ভয়ানক সমস্যার মধ্যে শিশুদের নিয়ে সুন্দর একটি দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম তাদের অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

কারিশমা ইরিন
শিক্ষার্থী, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: [email protected]