আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল, কতটা প্রস্তুত উপকূল

ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলা করতে কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে উপকূলজুড়েফাইল ছবি

প্রতিবছরই কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল। এতে তৈরি হয় নিরাপদ খাবার পানি ও খাদ্যের তীব্র সংকট। বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে বসতবাড়ির আঙিনা। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়ে আর বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে শুরু হয় ভোগান্তি।

এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে ইতিমধ্যে কেউ কেউ স্থানান্তরিত হয়েছেন শহরে। আর কেউ কেউ এখনো জন্মস্থানকে আঁকড়ে ধরে বসবাস করছেন পৈতৃক ভিটায়।

বছরের এই মৌসুম এলেই এই এলাকার মানুষের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। কখন ঝড় উঠবে, কখন বাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি ডুবে যাবে—এসব চিন্তার ভাঁজ পড়ে বাসিন্দাদের কপালে। রিমালসহ এ–জাতীয় ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে তাঁরা প্রস্তুতি নেন আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার। কিন্তু এভাবে কত দিন উপকূলসংলগ্ন জনপদের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকবে? কত কাল নিরাপদ খাবার পানির জন্য হাহাকার করবে?

আর কত দিন পর তাঁদের জন্য স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবে এ দেশের নীতিনির্ধারণী মহল, তা নিয়ে আজও প্রশ্ন থেকে যায়। এ বছর আবার আসছে রিমাল নামক ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে আজকালের মধ্যে। কিন্তু এই ঘূর্ণিঝড়কে মোকাবিলা করতে কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে উপকূলজুড়ে?

এদিকে উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রার শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১০ কিলোমিটার বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। ঝড়বৃষ্টি না এলেও সাধারণ জোয়ারের পানিতে বাঁধের বিভিন্ন স্থান ভেঙে পানি উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এই বাঁধের একটি অংশও যদি ভেঙে যায়, তাহলে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হবে। পানিবন্দী হয়ে পড়বে এ অঞ্চলের প্রায় তিন লাখ মানুষ, ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই যাদের উৎকণ্ঠা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বছরের মে মাস এলেই শুরু হয়ে যায় তাদের এই চিৎকার, আর্তনাদ। সে আহাজারিতে কেউ কেউ এগিয়ে এলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি আজও। সংস্কারের জন্য প্রতিবছর কিছু বরাদ্দ এলেও তার কাজ হয় অতি নিম্নমানের। এর ফলে সংস্কারের জায়গায়ও ভয় থেকে যায়।

অধিকাংশ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিজেদের দায় এড়িয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপায়। এর ফলে গতানুগতিক ভোগান্তি পোহাতে হয় এখানকার সাধারণ মানুষকে। এ জন্য উপকূলীয় জনপদকে এ দেশের মানচিত্রে টিকিয়ে রাখতে টেকসই বেড়িবাঁধ ও স্থায়ী উন্নয়নের বিকল্প নেই।

আমরা দেখেছি, আগামী জুন মাসে দুর্যোগকবলিত দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনসহ অনেক নাগরিক সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় জনপদকে বাঁচিয়ে রাখতে আন্দোলন, সংগ্রাম করে আসছে।

ইতিমধ্যে খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা তৈরি করেছে পাউবো। কিছু এলাকায় সংস্কারকাজও শুরু করেছে তারা। এর মধ্যে কয়রার উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে বাঁধের মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে কিছুটা ঝুঁকি কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ বাবদ ১ হাজার ২৩ কোটি টাকার যে বাজেট হয়েছিল, সেখানে ২০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি খুলনার কয়রায় ১ হাজার ৭২ কোটি ৩১ লাখ টাকার কাজের ৩৫ শতাংশের মতো সম্পন্ন হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু এমন ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকলে উপকূলকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য সরকারি কর্মপরিকল্পনায় কৌশল পরিবর্তন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে কর্তৃপক্ষের সুনজর ছাড়া কোনোভাবেই কাজের অগ্রগতি সম্ভব নয়। এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকার আরও বেশি উদ্যোগী ও আন্তরিক হবে; টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে—এ আশা রাখছি।

রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা