আতশবাজি আমাদের যে ক্ষতি করে গেল

ইংরেজি নববর্ষকে বরণ করে নিতে ঢাকায় আতশবাজি
ছবি: প্রথম আলো

‘বাবা বিড়াল বাজি ফুটাইছে...বাবা বাবা... (জড়িয়ে ধরে কান্না)’...যেদিন লেখাটা লিখছি, থার্টি ফার্স্ট নাইট চলে গেছে প্রায় চার দিন। এখনও সন্ধ্যা হলে অনেকে আতশবাজি ফুটাচ্ছে। আর আমার মেয়েটা বাজি ফুটলেই দৌড় দিয়ে আমার কাছে চলে আসে আর বলে বাবা, বিড়াল বাজি ফুটাচ্ছে। আমিই মেয়েকে বুঝিয়েছি যে, আমাদের বাড়ির নিচে যে বিড়ালটা মাঝে মাঝে মিউ মিউ করে, সেই দুষ্টু বিড়ালটা বাজি ফুটায়। আমার মেয়েও সেটা মেনে নিয়েছে কিন্তু বাজি ফুটার শব্দের ভয় তাকে এখনো তাড়া করে।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত আমি আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলাম। প্রতিবার বাজির শব্দে সে কেঁপে উঠেছে, আমি হাত দিয়ে তার কান বন্ধ করে ছিলাম অনেকক্ষণ। আসলে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটানা পটকা ও আতশবাজি ফুটতে থাকে, প্রায় সারা রাত ধরে। চারিদিক থেকে যখন পটকা-বাজির শব্দ আসতে থাকে শিশু এবং বৃদ্ধদের অবস্থা তখন খুবই খারাপ হয়ে যায়। বয়স্করা বুঝে বলে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে হয়তো কিন্তু শিশুদের জন্য এটা ভয়াবহ বিষয় হয়ে যায়। অনেকের পটকা ফুটানো এখনো শেষ হয়নি, তারা এখনো সন্ধ্যা হলে এগুলো ফুটিয়ে আনন্দ অনুভব করে।

পটকা ও আতশবাজির শব্দ কারও জন্য যেমন আনন্দের বিষয় হয় অন্য দিকে এটা কারও জন্য মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভীত সন্ত্রাস তৈরি করে। যাদের হার্টে সমস্যা আছে তাদের জন্য এটা অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। একজন শিশু কন্যার বাবা হিসেবে আমি থার্টি ফার্স্ট নাইটে শুধু অসহায় বোধ করেছি। আনন্দঘন নানা উপলক্ষে মানুষ উচ্চ স্বরে বিভিন্ন উপাদান ও অনুষঙ্গ যুক্ত করে থাকে। যেমন, বাড়িতে কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে আমরা গান চালিয়ে দিই। গান শুনতে শুনতে কোনো কোনো সময় আমরা শব্দ বাড়িয়ে আরও বেশি আনন্দ অনুভব করি। কিন্তু এগুলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে, একটা ছোট পরিসরে।

আমরা দেখি, অনেক কমিউনিটি সেন্টার বা বাসাবাড়িতে বিয়েতেও রাতের বেলা উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে নাচানাচি চলে। সবশেষে তিন চারটা উচ্চশব্দের পটকা ও আতশবাজি ফুটানো হয়। ঠিক এই রকম ঘটনা একটা ঘটেছে গত সপ্তাহে, মেয়েকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে হঠাৎ বুঝতে পারলাম আশপাশের কোনো বাসা থেকে বিয়ে বাড়ির নাচের মিউজিক বাজা শুরু করেছে, তখন বাজে প্রায় রাত এগারোটা। জানালা দরজা বন্ধ করে কোনো রকমে সামাল দিতে পেরেছিলাম যদিও বারোটার দিকে গান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওই বাড়ির আশপাশে যাদের বসবাস সেই সব পরিবারের শিশু ও বয়স্কদের অবস্থা কী হয়েছিল আমি বুঝতে পারছি।

আমার এই লেখার উদ্দেশ্য এই যে, উচ্চশব্দের বিয়ে বাড়ির পার্টি, পটকাবাজি, থার্টি ফার্স্ট নাইটে টানা আতশবাজির শব্দ এগুলো যে কারও কারও জন্য প্রাণহানি বা মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্ষতির পরিমাণটা কেমন তা ভুক্তভোগীরাই শুধু বুঝতে পারে। এ বিষয়ে সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন, প্রশাসনিকভাবে আরও কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

সবুজ কুন্ডু প্রকৌশলী ও উদ্যোক্তা