খাতা মূল্যায়ন

সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে প্রস্তাব উঠেছে যে, বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ড কর্তৃক অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি সমমান দাখিল পরীক্ষার বাংলা, ইংরেজি ও গণিত খাতা ভিন্ন ধারার শিক্ষকদের দ্বারা মূল্যায়ন করতে হবে। যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় একটি প্রস্তাব। কেননা বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে এবং জেনারেল সাবজেক্টের জন্য যেসব টিচার নিয়োগ পান তারা সবাই কোনো না কোনো স্কুল-কলেজ থেকে পাস করা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাবলিক ভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করা হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিতান্তই অবান্তর। সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে যে প্রস্তাবটি তোলা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে অপ্রয়োজনীয় একটি প্রস্তাব। যদি মাদ্রাসার আধুনিক শিক্ষার বিষয়ে কোনো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে আরও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতো। কিন্তু তা না করে শুধুমাত্র খাতা মূল্যায়নের দিকে জোর প্রচেষ্টা চালালে তা কল্যাণের পরিবর্তে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।

একই প্রক্রিয়ায় একই কোয়ালিটির শিক্ষক'রা স্কুল ও মাদ্রাসায় নিয়োগ পাওয়ার পরও খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আলাদা প্রস্তাব রাখা অযৌক্তিক। বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা দেশের সব ক্ষেত্রে সফলতার সাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। এমনও দেখা গেছে যে, একটি মাদ্রাসা থেকে ঢাবি তে যত শিক্ষার্থী চান্স পাচ্ছে একটি কলেজ থেকেও তা পাচ্ছে না । এ ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের পদচারণা অব্যক্ত করার মতো। এটা দেশের জন্য গৌরবময় একটি ব্যাপার। সারা দেশে মাত্র ৩টি মাদ্রাসা পূর্ণ সরকারি সুবিধা পেয়ে থাকে, অথচ সরকারি স্কুল-কলেজের সংখ্যা (প্রাথমিক বাদে) ৫৬৯ টি। এমপিওভুক্ত অনেক মাদ্রাসা রয়েছে যেখানে এক শ্রেণির একাধিক শাখা থাকার পরেও পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানের নিজ খরচে বাড়তি শিক্ষক রাখতে হচ্ছে।

এত শিক্ষক সংকট, ভবন সংকট, সরকারি সুযোগ-সুবিধার সংকট থাকার পরেও দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল সেকশনে তাদের এমন অভাবনীয় সাফল্যের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা উচিত এবং তাদের মানোন্নয়নে কল্যাণজনক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

আবু মো. ফজলে রোহান

শিক্ষার্থী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা, নবগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা।