প্রতারণা থেকে বাঁচাতে পারে সচেতনতা

প্রায়ই খবরের কাগজ কিংবা গণমাধ্যমে প্রতারণার খবর প্রকাশিত হয়। এই অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। সমাজে বসবাসের ফলে মানুষের সঙ্গে মানুষের বিভিন্ন সম্পর্কে তৈরি হয়, যার ভিত্তি হলো বিশ্বাস। প্রতারণার ফলে মানুষের ওপর মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়, যার ফল পরোক্ষভাবে সমাজের ওপর এসে পড়ে। সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ মানুষের সম্পর্ক নষ্ট করে বলে প্রতারণাকে সামাজিক ভাইরাস বলা উচিত।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় প্রতারণার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। আসলে প্রতারণার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া খুব কঠিন। কারণ, প্রতিনিয়ত প্রতারকেরা নতুন নতুন উপায় মানুষকে প্রতারিত করছে। মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময়ে ছোটখাটো হলেও এমন পরিস্থিতির শিকার হয়। তার মধ্যে একটি হলো প্রেম-ভালোবাসাজনিত বিষয়ে। কিছু কিছু প্রতারণায় মানুষ আইনি প্রতিকার আশা করে না বা চায় না, বিষয়টি উড়িয়ে দেয়। কিন্তু যদি সমাজের বড় বড় অপরাধের দিকে তাকানো হয়, তবে দেখা যায় যে ছোট–বড় অনেক ধরনের প্রতারণা হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় প্রতারক চক্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়, বিচারের মুখোমুখি হয়। কিন্তু এটা থেমে থাকে না।

কিছুদিন আগে কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হন, যাঁরা বাংলাদেশি এক নারীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। তাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করে বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দেওয়ার নামে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেন।

আবার করোনা মহামারিতে সরকার বিভিন্ন হাসপাতালকে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করার অনুমোদন দেয়। তার মধ্যে কিছু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা পরীক্ষা ছাড়াই ফলাফল দিয়েছে। এটাও ছিল বড় প্রতারণা। আবার এমনও প্রতারক আছে, যারা ভিন্ন উপায়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে।

এখন প্রতারকেরা রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যবহার করে প্রতারণা করে থাকে। তারা জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তোলে। এগুলো দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা অনুযায়ী এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড এবং সঙ্গে অর্থদণ্ডও হতে পারে। আবার যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকে কিংবা সহায়তা করে, তারাও দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী সমান অপরাধী এবং সমান দণ্ড পাবে। বর্তমানে প্রতারণার ক্ষেত্র এতটাই ব্যাপক যে উক্ত আইনগুলো অপরাধের শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট নয়। আবার প্রতারণার ধরনভেদে আলাদা আইন ও মামলা-মোকদ্দমা হয়। যেমন চেক জালিয়াতি, দলিল জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ইত্যাদি। আইনের অপর্যাপ্ততা ও যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায় না। বের হয়ে এসে আবারও প্রতারক চক্রে যোগদান করে।

প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতার বিকল্প নেই। কোনো ব্যবসা কিংবা লেনদেনে গেলে আইনসম্মত উপায়ে চুক্তি করে নিতে হবে। কারণ, প্রতারকদের প্রধান লক্ষ্য থাকে অর্থসম্পদ আত্মসাৎ করা। কোনো বিষয়ে লিখিত প্রমাণ ও সাক্ষী থাকলে খুব সহজে প্রমাণ করা যায়। রাস্তাঘাটে চলাকালীন অন্যকে কোনো প্রকার সুযোগ দেওয়া কিংবা বিশ্বাস করা যাবে না। বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানকালে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের খোঁজ রাখতে হবে। প্রতারিত হলে যত দ্রুত সম্ভব থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে।

প্রতারকেরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সুকৌশলে কাজে করে। সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আগে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আইনি প্রতিকার নিতে হবে। সবশেষে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সব সময় নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখতে হবে, কারণ, অপরাধের প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম।

জিসান তাসফিক

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়