প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোটা পদ্ধতি কতটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোটা পদ্ধতির হার বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানে আছে—নারী ৬০%, পুরুষ ২০% ও পোষ্য ২০%। এ ছাড়া বিজ্ঞান শাখায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষক ২০% নিয়োগের কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। কোটা পদ্ধতিতে এই নিয়োগব্যবস্থা অপ্রয়োজনীয় তো বটেই, উপরন্তু তা উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে প্রতিবন্ধক।

কোটা পদ্ধতিতে নিয়োগবিধি চালু হওয়ার সময় বাংলাদেশ ছিল একটি পশ্চাৎপদ নিম্ন আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। তখন আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের ব্যাপক বৈষম্য ও নিম্ন শিক্ষা হারের কারণে ওই পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন বিশ্বায়নের যুগে সমগ্র বিশ্ব একটি গ্রামের মতো। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উন্নত বিশ্বের সারিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় এসে দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড় করানোর অন্যতম প্রতিবন্ধক এই কোটা পদ্ধতি। এর ফলে ব্যাহত হচ্ছে সামাজিক ভারসাম্য। কারণ, বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে উচ্চ মেধাবীরা এ পেশায় নিয়োগ পেতে সাধারণত আগ্রহী হন না। এখানে মধ্যম মানের মেধাবীরাই আসেন, যাঁদের বেশির ভাগের স্থায়ী ঠিকানা গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের ছেলেরা উচ্চশিক্ষা শেষ করে প্রাথমিক শিক্ষায় পেশাগত ভিত্তি গড়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনেন। কিন্তু কোটা পদ্ধতির গ্যাঁড়াকলে তাঁদের হাজারো স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়।

বর্তমানে দেশে শিক্ষার হার ৭২%। তার মধ্যে নারীশিক্ষার হার ৭০%, পুরুষ শিক্ষার হার ৭৫%। সেখানে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা ৬০%, আর পুরুষ কোটা ২০%। এই পার্থক্য বহাল রাখার যৌক্তিকতা আছে কি? নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষেরা যে মাত্রার বৈষম্যের শিকার হয়, তা আরও একটি পরিসংখ্যান দিলে পরিষ্কার হবে। ধরা যাক, কোনো উপজেলায় ১০০টি শূন্য পদের বিপরীতে এক হাজার আবেদন জমা হলো। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে যদি সেখান থেকে ৩০০ আবেদনকারী পাস করেন, তাহলে হয়তো দেখা যাবে, তার মধ্যে ২০০ জনই পুরুষ। এই ১০০ পদের বিপরীতে ৬০% নারী হলে ১০০ জনের মধ্যে ৬০ নারীর চাকরি হবে। পক্ষান্তরে ২০০ পুরুষ উত্তীর্ণ হলেও মাত্র ২০ জন চাকরির সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া পোষ্য ২০ জনের ভেতর চাকরি হবে ১২ নারীর, সেখানে চাকরি পাবেন ৮ পুরুষ। তাহলে ১০০ পদের বিপরীতে নারী নিয়োগ পেল ৭২%। অন্যদিকে পুরুষ পেল মাত্র ২৮%। কোটা পদ্ধতির নামে এই বৈষম্য কতটা যৌক্তিক?

মো. আবদুল হক আজাদ

প্রধান শিক্ষক (অবসরপ্রাপ্ত)

গামুরীবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

কলাপাড়া, পটুয়াখালী।