ফার্মেসিতে মানহীন ওষুধ বিক্রি বন্ধ হোক

নিত্যপ্রয়োজনে মৌলিক চাহিদা পূরণে যেমন আমরা খাবার গ্রহণ করি, ঠিক তেমনি একজন অসুস্থ লোক বা রোগীর কাছে ওষুধ হচ্ছে তার মৌলিক পাথেয়। ওষুধকে মৌলিক পাথেয় বলার কারণ, ধরা যাক একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী তাঁর স্বাভাবিক জীবন চালাতে, অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ তথা এই পাথেয়র সাহায্য নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে রোগীর মনোবল তৈরি হচ্ছে, তাঁকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করছে।

এই পাথেয় তথা ওষুধের গুরুত্ব কার কাছে কতটুকু? একজন ওষুধ বিক্রেতার কাছে ওষুধের যতটা না ব্যবহারিক গুরুত্ব রয়েছে, তার বিপরীত দিকে একজন রোগীর কাছে ওষুধের ঠিক ততটাই গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এই ওষুধ তাঁকে বিকল্প উপায়ে স্বাভাবিক জীবনদানে সাহায্য করে।

আমরা মানু্ষ, সৃষ্টির সেরা জীব ঠিকই, তবে কিছু কিছু মানু্ষ বিবেকবোধ গুলে খেয়ে পশুর হিংস্রতাকেও হার মানাচ্ছে তাদের ভয়ংকর অর্থলিপ্সুতাকে পুঁজি করে। আর তাদের এমন মানসিকতার কাছেই হার মানতে হয় সাধারণ শ্রেণির মানুষকে।

মানু্ষ তার প্রয়োজনে, অর্থাৎ অসুস্থতা থেকে মুক্তি পেতেই ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। নানা রোগের পাথেয় এই ওষুধ, যা কারও কারও কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সঙ্গী। সেই ওষুধ নিয়ে একশ্রেণির মানু্ষ আজ ব্যবসায় মেতেছে। কখনো মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে নকল ওষুধ। কখনো মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, যা একপ্রকার বিষ। এই নকল ওষুধের ফলে শরীরে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে নানা জটিলতা, যা শরীরের কোনো কোনো অর্গানকে অচল করে দিতে পারে। এর থেকে সৃষ্টি হতে পারে জানা বা অজানা নানা রোগ।

মানু্ষ আজ কিসে নিরাপদ? বিভিন্ন রকম খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যে বিষক্রিয়া আমাদের জীবনকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। যে পরম পাথেয় আমাদের জীবনকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, সেই দিকেও আজ অমানবিকতার ছায়া পড়েছে। মানহীন ওষুধ বিক্রি, অনুমতিপত্র ছাড়াই ওষুধ বিক্রি যেন মাছের বাজারের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। যেভাবেই হোক, থলেতে একবার তুলে দিলেই হলো। বাকিটা ক্রয়কারী ভোগ করবে!

এভাবে আর কত প্রতারণা চলবে, যার মতো জাতির জন্য তৈরি হতে পারে ভয়াবহ এক অধ্যায়। এখনই সময় নকল, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের ওপর নজরদারি বাড়ানো। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে এবং কঠোর শাস্তির বিধান রেখে তাদের গর্হিত অপরাধের সাজা দিতে হবে। অপেশাদার ব্যক্তিদের ওষুধের দোকানে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। কতটুকু মানসম্পন্ন ওষুধ সাধারণ মানু্ষ হাতে পাচ্ছে, এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি রাখতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শপত্রের একটি কপি দোকানির কাছে জমা দিয়ে ওষুধ সংগ্রহ করতে হবে এবং দোকানিকে একটি বিল তৈরি করে দিতে হবে, যেন কী কী ওষুধ বিক্রি করছে, তার একটি প্রমাণপত্র থাকে।

ওষুধ নিয়ে সব রকম অনিয়ম, দুর্নীতি রুখে দিতে হবে। আর এ জন্য একে অপরকে সাহায্য করতে হবে। ওষুধ ক্রয়ের সময় মেয়াদ আছে কি না, প্রত্যেক মানুষকেই তা বুঝে নিতে হবে। অসংগতি দেখলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। তাহলেই ওষুধশিল্প এগিয়ে যাবে, রক্ষা পাবে জীবন।

*কাব্য সাহা

শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।