বিদেশে চাকরির নামে প্রতারণা বনাম চোরের মায়ের বড় গলা

স্বপ্ন দেখা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেক মানুষই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে। আমারও স্বপ্নের একটা অংশ বিদেশে যাওয়া, মানে সৌদি আরবে যাওয়া ও হজ করা। সৌদি আরবে এসেছি মাসখানেক হয়ে গেছে। যিনি নিয়ে এসেছেন, তিনি একজন মৌলভিও বটে। তাঁর নাম হৃদয় (ছদ্মনাম)। তিনি আমার পাশের এলাকার একজন বাসিন্দা। চার বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন, তাই তাঁকেই বেছে নিই পবিত্র ভূমিতে যাওয়ার আশায়। প্রথম পরিচয়ের পর থেকেই তাঁর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। সেই সখ্য থেকে বিদেশে আসার পরিকল্পনা শুরু হয়। এমনকি পাসপোর্ট থেকে শুরু করে বিদেশে আসা পর্যন্ত প্রতিটি কাজ তাঁর নির্দেশনায় করি। একটি চকলেট ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য ভিসা দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

তাঁর আশ্বাসে সাড়া দিয়ে চার লাখ টাকা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নিই। অবশেষে আমার চাচা মাস্টার মাসুক মিয়া তাঁকে পরিষ্কারভাবে জিজ্ঞেস করলেন, চকলেট ফ্যাক্টরি কি না। তাতেও তিনি বলেছেন, বিশ্বাস রাখেন, টেনশনের কোনো কারণ নেই, অরিজিনাল চকলেট ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। ফলে তাঁর কথায় শতভাগ বিশ্বাস রাখলাম। হৃদয় ভাইয়ের কথামতো সময়ে সময়ে তাঁর এজেন্সিকে টাকা দিয়েছি। কখনো ৫০ হাজার, কখনো এক লাখ দিয়ে সব টাকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিশোধ করা হলো।

আমিও বিদেশে আসার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিই, পোশাক-আশাক ক্রয় করি। সর্বশেষ বিদায়ের ঘণ্টা বেজে উঠলে বাড়িতে সৃষ্টি হলো স্বজনদের এক অসাধারণ মিলনমেলা। পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে মাস্টার চাচাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হলাম। এজেন্সি থেকে কাগজপত্র বুঝিয়ে নিতে এসে চরম দুর্ব্যবহার, নাকানিচুবানির পর এয়ারপোর্টে আসি।

সৌদি আরবে আসার পর...
সৌদির রাজধানী রিয়াদের কিং খালেদ এয়ারপোর্ট থেকে এক ড্রাইভার রিয়াদের মালাজ শহরের এক বাসায় নিয়ে এলেন। হৃদয় ভাই থাকেন সৌদির আল বিসা শহরে। আমার কাছ থেকে বহুদূরে। কিছুদিন পর জানলাম, এটা একটা সাপ্লাই কোম্পানি। আর সাপ্লাই কোম্পানির বৈশিষ্ট্যই হলো, লোকজনকে অন্য কোথাও চড়া দামে বিক্রি করে নিজেরা ফায়দা লুটে নেওয়া। যেখানে কাজ করলে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা যায় না। শুধুই হতাশার চাদরে আবৃত থাকতে হয়। এদিকে আসার পর থেকেই নিজের টাকা দিয়ে খানাপিনা খেয়ে যাচ্ছি। হৃদয় ভাইকে ফোন দিলে কাজের আশ্বাস দিয়ে বুঝিয়ে দেন।

এভাবে মাসখানেক পার হয়ে গেল, কাজের কোনো পাত্তাই পেলাম না। হৃদয় ভাইয়ের মুখরোচক কথাবার্তার পুরোটাই বিপরীত পাচ্ছি। আজ অবধি কোনো কাজ পাইনি। হৃদয় ভাইকে ফোন দিলে তিনি উল্টো ধমকের স্বরে কথা বলেন। ফেসবুকে ইশারা-ইঙ্গিতে লেখালেখি করে যাচ্ছেন, উপকারীর ঘাড়ে লাথি, মানুষের উপকার করতে নেই ইত্যাদি। অথচ তিনি আমাকে এনে কাজ তো দূরের কথা, বিশ্বাসঘাতকতা করে টাকা পকেটেই ঢোকালেন। এ জন্য মানুষ বলে, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। চোর চুরি করে আবার ভালো সাজার জন্য হইচই করে বেড়ায়। হৃদয়ের চরিত্রের দৃশ্যটা পুরোটাই চোরের মায়ের বড় গলার নামান্তর।

বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নামে এমন প্রতারক ব্যক্তিদের কাছ থেকে সতর্ক থাকা উচিত। আমি সবকিছু সাধ্যমতো যাচাই-বাছাই করে নিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছি। আমার মতো এমন পরিস্থিতিতে কেউ পড়ুক, চাই না।

এম ফয়সাল আহমাদ
সৌদি আরব