বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের উপায় কী

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৭ মার্চ যে ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা আজ তা ৮ মাস হতে চলল।

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৭ মার্চ যে ছুটির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল দিন, সপ্তাহ, মাসের গণ্ডি পেরিয়ে আজ তা বছর ছুঁই ছুঁই।

কর্মক্ষেত্র চালু হলেও আগের মতোই বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের জীবন চরম হতাশায়। একদিকে এই তরুণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থেকে নিজেরা হাঁপিয়ে উঠেছেন, পাশাপাশি রয়েছে তাঁদের পড়াশোনার চিন্তা।

করোনাভাইরাসের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল দিতে অনেক সময় লেগেছে, তবু দেওয়া হয়েছে সেই ফল, কলেজ ভর্তি কার্যক্রমসহ অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। জেএসসি, পিএসসি বাতিল করা হলো। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অটো পাসের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করল সরকার। কিন্তু কী হবে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গতি?

তাঁদের কথা কেন ভাবছে না সচেতন মহল। এতগুলো দিন হলো, ক্যাম্পাস থেকে দূরে বাড়ির মধ্যে তাঁরা নিজেদের করেছেন গৃহবন্দী। পাশাপাশি একাডেমিক পড়াশোনার চরম ক্ষতি। অনলাইন ক্লাস নামমাত্র হলেও, ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীও উপস্থিত থাকছেন কি না, সে খবর কি কেউ রাখছে? বিনা মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট কেনার সুবিধাও দিতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিভাইস দেওয়া হবে, এমন কথা শোনা গেলেও এত দিনেও নেই তার কার্যকারিতা। ইতিমধ্যে সেমিস্টার সেশনজটের আশঙ্কা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনোরূপ পরীক্ষা ছাড়াই অপর সেমিস্টারে উত্তীর্ণসহ পরবর্তী সময়ে দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একসঙ্গে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কতটুকু কার্যকর?

এসব গেল শুধু একাডেমিক দিক। এ ছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচ নিজে চালানোর জন্য টিউশনি বা পার্ট টাইম জব করেন। করোনাকালে তাঁদের সবার হল ছেড়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় আয়ের উৎস হারিয়ে ফেলছে। যাঁরা নিজেদের কাজ বাঁচানোর তাগিদে শহরে অবস্থান করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না হলে প্রবেশের অনুমতি। অনেক ফরমালিটি করে ঢুকতে পারলেও নিজেদের দরকারি জিনিস নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের বিভিন্ন প্রশ্ন ও বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এত দিন ধরে হলগুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্র ও কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থী তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হলেই রেখে এসেছিলেন, কারণ কারও ধারণা ছিল না এই ছুটির মেয়াদ এত দীর্ঘ হবে।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কি অতি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়? অন্ততপক্ষে হলগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সেশনজট থেকে মুক্তি দিতে এবং তাঁদের অন্যান্য সমস্যার বিষয় বিবেচনা করে অতি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

* সানজানা হোসেন

তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়