লাউ না কদু!

‘লাউ’কে যদি কেউ খুব জোরে চাপ দিয়ে বিকৃত করে, এবং তারপর সেটাকে ‘কদু’ নাম দেয়, তাহলে সার্বিকভাবে কোনো পরিবর্তন হয় না। ‘বিয়ের বয়স’ নিয়ে নতুন আইনটির সংশোধিত রূপের খসড়া দেখে এই কথাটিই বারবার মনে পড়ছে।
গতকালের পত্রিকার শিরোনাম দেখলাম, ‘বিয়ের বয়স ১৮-ই থাকছে, মা-বাবা চাইলে ১৬’ (সূত্র: প্রথম আলো, ৭ মার্চ)। কী চমৎকার! মনে হয়, যেন গ্রামে গ্রামে যেসব বাল্যবিবাহ হচ্ছে, সেগুলো মেয়েরা নিজের ইচ্ছায় করে থাকে! বাবা-মা কিছুই জানে না!
প্রথম দিকে যখন এই আইন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল, তখন প্রথম আলোতে বিশিষ্ট স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ রওশন আরা তাঁর একটি প্রবন্ধে এর সার্বিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন; সেখানে স্বাস্থ্যগত দিকটা ছিল সর্বাগ্রে।
এমনকি বর্তমানে এই ‘কদু’ধরনের খসড়া আইনের পরেও বিশেষজ্ঞরা আপত্তি জানিয়েছেন। অথচ অন্যান্য কারণে বিয়ের বয়স আরও বাড়ানোর কথাই সামাজিক বিজ্ঞানের জনসংখ্যাবিষয়ক অধ্যায়ে সব সময় লেখা থাকে! এমন পশ্চাদমুখী আইন যঁারা করতে চাচ্ছেন, তঁারা কী ভাবনাচিন্তা করছেন সেটা ভেবে দেখা উচিত। এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমতে আরও জোরালোভাবে গুরুত্বারোপ করা উচিত।
যদি এই আইন না হয়, তাহলে কি বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে? তিক্ত সত্য হলো না, হবে না। ১৮২৯ সালে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরে দীর্ঘদিন ধরে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানেই সতীদাহ হয়েছে। কিন্তু আজকে এই প্রথা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। নারী দিবসে দাবি জানাই, নারীকে পিছিয়ে দেওয়ার এই আইন করবেন না। তঁাকে এগিয়ে যেতে দিন।
অংকন ঘোষ দস্তিদার
ঢাকা।