লেজুড় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হোক

লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই রাজনীতি বন্ধ করতে হলে সবার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক–রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত কিছু শিক্ষকের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি কোনো অংশে কম হয় না। নষ্ট দলীয় ছাত্ররাজনীতির কারণেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়, এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি তো ছাত্ররাজনীতি নয়।

শিক্ষক–রাজনীতির কারণে শিক্ষার প্রকৃত মান নষ্ট হচ্ছে। বড় পদ ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য একশ্রেণির শিক্ষক ছাত্রনেতাদের ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা ছাত্রনেতাদের অন্যায় কাজে বাধা দেওয়ার নৈতিক মনোবল ও অধিকার হারিয়ে ফেলেন।

গবেষণা ও শিক্ষাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রধান কাজ হলেও তাঁদের একটি বড় অংশ রাজনীতির নামে সুবিধা আদায়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন পদ–পদবির জন্য কোনো দলের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করেন, তখন নাগরিক হিসেবে আমরা লজ্জা বোধ করি।

দলীয় লেজুড় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে হলেও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নই। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির জন্য নৈতিকতাসমৃদ্ধ সুশিক্ষার পাশাপাশি সুস্থ রাজনীতিচর্চা অপরিহার্য। সুস্থ ছাত্ররাজনীতির সুরক্ষা দরকার, এ জন্য একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা দরকার, যা ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতিকে পথ দেখাবে। বহু বছর ধরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এগুলো চালু করা জরুরি। তা না হলে দেশে নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে। কেবল ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা বা অন্য পেশার মানুষ দিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতি চলতে পারে না।

জাতির মেধাবী সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করেন, তাঁদের পরামর্শ রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাঁরা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে না জড়ালে জাতি উপকৃত হতে পারে।

শিক্ষক যেমন মানুষ গড়ার কারিগর, তেমনি ছাত্রছাত্রীরা দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই এখনই সময়, দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের জন্য কাজ করার। এ জন্য বন্ধ হোক দলীয় লেজুড় ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি।

*কামরুল হাসান, ঢাকা