সরকারি চাকরি ও পুলিশ প্রতিবেদন

প্রথম আলোয় গত ৪ অক্টোবর প্রকাশিত ‘বিসিএস ক্যাডার, নেতিবাচক পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে যাচ্ছেন মেধাবীরা’ শীর্ষক খবরটি পড়ে ব্যথিত হয়েছি। এই প্রতিবেদন থেকে জেনেছি, গুটিকয়েক পুলিশ কর্মকর্তার কলমের খোঁচায় তথা নেতিবাচক প্রতিবেদনের ফলে একেক জন মেধাবীর আজন্মলালিত স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। তারা যখন সফলতাকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলছে, তখন শেষ মুহূর্তে পুলিশের নেতিবাচক প্রতিবেদন তাদের জীবনকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

প্রশ্ন আসে, পুলিশ প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য কী এবং কোন নীতিমালার আলোকে এ রিপোর্ট একজন সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তা তৈরি করেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাতে নামমাত্র চোখ বুলিয়ে ছাড় করে দেন আর তাতেই শেষ হয়ে যায় একজন মেধাবীর জীবন কাহিনি। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব আলী ইমাম মজুমদার সাহেবের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য।

তিনি বলেছেন ফৌজদারি অপরাধের দায় ছাড়া অন্য কোনো কারণে কাউকেই বাদ দেওয়া উচিত নয়। অথচ আমরা দেখছি বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ বিবেচনা করেই সরকারি চাকরিতে চূড়ান্ত নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে যা অনুচিত। যার ফলে দেশ, জাতি ও জনগণ বঞ্চিত হচ্ছেন একজন মেধাবী সরকারি সেবকের সেবা থেকে। এ সূত্রে পাকিস্তানের শেষ দিকের অর্থাৎ ৬০ দশকের শেষের দিকে নিয়োগ পাওয়া একজন সিএসপি অফিসারের কথা আমি উল্লেখ করতে চাই।

সন তারিখ মনে নেই, তবে ঘটনাটা এ রকম: বর্তমান স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর বাবা মরহুম রফিক উল্লাহ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতি করতেন এবং তিনি এক বছর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু আইয়ুব সরকার আওয়ামী ঘারানার রাজনীতির কারণে তৎকালীন প্রধান ক্যাডার সিএমপি হতে পারা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করেনি। যদি তা করা হতো তাহলে বঙ্গবন্ধু একজন তুখোড় ব্যক্তিগত সচিব পেতেন না এবং বাংলাদেশ ও জনগণ বঞ্চিত হতো একজন স্বনামখ্যাত কর্মকর্তার মেধার ফসল থেকে।

আমি আশা করব, দেশের অনেক সচেতন নাগরিক আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, বিসিএস ক্যাডারের সব চাকরিতে নিয়োগের প্রধান মাপকাঠি হবে গৃহীত পরীক্ষায় অর্জিত ফল অনুযায়ী, অন্য কোনো মাপকাঠি নয়। তবে কোনো অপরাধীকে অবশ্যই নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

কাজী বজলুর রহমান
উত্তরা, ঢাকা