সাকরাইনেও কি থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো ‘আগুন নিয়ে খেলা’ দেখব?

পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে সাকরাইন উৎসবে মেতে ওঠে পুরান ঢাকাবাসী
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

সাকরাইন উৎসব মূলত পৌষসংক্রান্তি। ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদ্‌যাপন এটি, ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে পৌষ মাসের শেষ দিনটি ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় সংক্রান্তি হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে।

এককথায় বলা যায়, সাকরাইন হচ্ছে একধরনের ঘুড়ি উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জির নবম মাস পৌষের শেষ দিনে আয়োজিত হয়, যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির হিসাবে জানুয়ারির ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে। বাংলায় দিনটি পৌষসংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকরসংক্রান্তি নামে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের এই দিনে মোগল আমলে নায়েবে নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। সেই থেকে দিনটিকে কেন্দ্র করে উৎসবের আয়োজন করা হয়।

সাকরাইনে বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রংবেরঙের ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী শহরের আকাশ। জাত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই সাকরাইন উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসব একসময় ঘুড়ি ওড়ানো কেন্দ্রিক থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্‌যাপনের ধরনে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, ফানুস ওড়ানো, উচ্চ শব্দে গানবাজনা করা, আগুন মুখে নিয়ে খেলা করা, উচ্চ শব্দে আতশবাজি ফোটানো ইত্যাদি। আবেগপূর্ণ এসব কাজে উৎসব উদ্‌যাপনের পরিবর্তে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চলতি ইংরেজি বছর শুরু উপলক্ষে ফানুস ওড়ানোর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ওড়ানো এসব ফানুসের মাধ্যমে রাজধানীর ১০টি জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণহানি না হলেও অনেকে আহত হয়েছেন এবং পুড়েছে বিভিন্ন আসবাব। এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্যমতে, আতশবাজি ফোটানোর ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানেন না ঢাকাবাসী। যার ফলস্বরূপ থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজির শব্দে সৃষ্ট সমস্যার কারণে মারা যায় তানজিম উমায়ের নামে এক শিশু। কারণ, আতশবাজির বিকট শব্দে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত শিশুটি মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।

বর্তমান সময়ে অনুষ্ঠান ও উৎসবগুলোতে ফানুস ওড়ানো, আতশবাজি ফোটানো কিংবা ডিজে পার্টি করা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কারও কাছে আনন্দের হলেও অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই সাকরাইন উৎসবকে সামনে রেখে আরও একবার সচেতন হওয়া ও প্রশাসনের তৎপর থাকা জরুরি, যেন উৎসবের আয়োজন অন্যের জন্য কান্নার কারণ না হয়।

মুতাসিম বিল্লাহ মাসুম
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা