সড়কে প্রতিযোগিতা নয়, চাই শৃঙ্খলা

সড়ক দুর্ঘটনাপ্রতীকী ছবি

জীবনের নানাবিধ কারণে মানুষকে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছার জন্য কখনো তারা হেঁটে চলে, আবার কখনো যানবাহন ব্যবহার করে। নিরাপদে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চায় সবাই। কেউই চায় না জীবনপ্রদীপ নিভে যাক সড়ক দুর্ঘটনায়। পঙ্গুত্ব নিয়ে কে বাঁচতে চায়? তবু্ও আজ ভয় হয় রাস্তায় চলতে। আজ বাংলাদেশের সড়কে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে মানুষ যানবাহনে কতটুকু নিরাপদ, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গাড়ি ওভারটেক করার যে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন চালক ও তাঁদের সহকারীরা, তা নিয়ন্ত্রণ না করা হলে ভয়াবহ অবস্থার শিকার হবে সাধারণ মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন বাংলাদেশে গড়ে ৫৫ ব্যক্তি প্রাণ হারাচ্ছে। বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যে আরও বলা হয়, প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১২,০০০ মানুষের মৃত্যু হয় আর আহত হন ৩৫,০০০ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, শুধু অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি, যাতে নিহত হয়েছেন ৩৮৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৬৯৪ জন। প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব। প্রশিক্ষণের অভাবের কারণেই তাঁরা সড়কে প্রতিযোগিতা করেন, কার আগে কে যাবেন। এর ফলে সড়কে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ, পঙ্গু হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে আমাদের সড়কব্যবস্থার করুণ দশা। ফিটনেসবিহীন গাড়ির সমাহার, প্রশিক্ষণহীন চালক ও সহকারী, যানবাহনে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, ট্রাফিক নির্দেশনা না মানা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি সমস্যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের অব্যবস্থাপনার চিত্র। তারপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও আন্তরিকতায় ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পাস হয়, যা ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে আগের তুলনায় শাস্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নতুন আইন সম্পর্কে মানুষকে জানাতে নানামুখী প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে এখনো আইন মানছে না অনেকেই, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।

সড়কে প্রতিযোগিতা রোধ এবং শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামা বন্ধে যাত্রীছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, সময়ের সমষ্টি হলো জীবন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। আসুন সড়ক আইন মেনে চলি, নিরাপদে গন্তব্যে ফিরি।

আকবর হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী