রাগ ধরা নয়, বাগ্ধারা

বাংলা ভাষায় যে বাগ্‌ধারাগুলো আছে, সেগুলো এল কোথা থেকে? বলছেন তারিক মনজুর

তুঘলকি কাণ্ড
মুহম্মদ বিন তুঘলক ১৩২৫ থেকে ১৩৫১ সাল পর্যন্ত দিল্লির সুলতান ছিলেন। একদিন তাঁর হঠাৎ মনে হলো রাজধানী দিল্লি থেকে সরালে ভালো হয়। যে ভাবনা, সে–ই কাজ। দিল্লি থেকে অনেক দক্ষিণে দেবগিরিকে করলেন রাজধানী। সিংহাসন আর উজির-নাজির নিয়ে চলেও গেলেন সেখানে। এই হঠাৎ পরিবর্তনের জন্য কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না তাঁর। ফলে বিপত্তি বাধল শুরুতেই। তল্পিতল্পা গুটিয়ে আবার 

ফিরে আসতে হলো দিল্লিতে। সুলতান তুঘলকের মতো এ রকম খামখেয়ালি আচরণ দেখলে বলা হয় তুঘলকি কাণ্ড। 

মগের মুল্লুক
যখন কোথাও অরাজকতা আর অনাচার চলে, তখন তাকে বলা হয় মগের মুল্লুক। এই মগ কিন্তু পানি খাওয়ার মগ নয়। এই মগ হলো আরাকান জলদস্যু। আজ থেকে প্রায় চার শ বছর আগে মিয়ানমার থেকে আসা জলদস্যুরা ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে ছেড়েছিল। অত্যাচার, লুটপাট, এ দেশের লোকদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া—কিছুই বাকি রাখেনি তারা। তখনকার পরিস্থিতি থেকে এই বাগ্‌ধারাটির জন্ম। তবে ১৮৬৬ সালে শায়েস্তা খাঁ চট্টগ্রাম জয় করার পর মগদের সন্ত্রাসের অবসান হয়। 

জগাখিচুড়ি
ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরীতে রয়েছে জগন্নাথের মন্দির। রাজা অনন্তবর্মণ এই মন্দির নির্মাণ করেন বারো শতকে। ভক্তদের দেওয়া চাল, ডাল আর সবজি দিয়ে এখানে প্রতিদিন খিচুড়ি রান্না করা হতো। নানা জনের দেওয়া নানা রকম চাল, ডাল আর তরিতরকারি মিশিয়ে তৈরি হতো সেই খিচুড়ি। কোথাও বিভিন্ন জিনিসের বিদ্‌ঘুটে সংমিশ্রণ দেখলে জগন্নাথ মন্দিরের খিচুড়ির সঙ্গে মিলিয়ে বলা হয় ‘জগাখিচুড়ি’।

লেখক: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়