‘ইকবাল হোসেন মার্কা কাহিনি’ বাদ দিতে বললেন মান্না
সরকারকে ‘ইকবাল হোসেন মার্কা কাহিনি’ বাদ দিতে বলেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন (বাপসা) আয়োজিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সংহতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ হয়।
কুমিল্লার মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনার মামলায় প্রধান আসামি ইকবাল হোসেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও পবিত্র কোরআন অবমাননার মামলায় গতকাল ইকবাল হোসেনসহ চার আসামির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আজকের সমাবেশে মান্না বলেছেন, ‘ইকবাল হোসেন মার্কা কাহিনি বাদ দেন। তাঁর মা বলেছেন ১০ থেকে ১২ বছর ধরে ছেলে মদের ওপরই থাকে, নেশাখোর। পুলিশ বলেছে ভবঘুরে। সেই লোক কোরআন শরিফ রেখে দিয়েছেন। ভিডিও নাকি আছে।’
মান্না বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে দাবি করেছিলাম, আজ আবার দাবি করছি ভিডিও থাকলে ওই লোকটি কোরআন রাখল, হনুমানের গদা নিয়ে হাঁটা দিল সেই ভিডিও দেখতে চাই। টেলিভিশনে এই ভিডিও দেখালে সরকারের কি নাক কাটা যাবে? সরকার এই ভিডিও দিচ্ছে না কেন? ভিডিও নেই, বানাতেও পারেনি।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ওই ভবঘুরে লোক যখন বের হয়েছেন, কারা কারা যেন তখন পুলিশকে ফোন করে বলেছেন, কোরআন অবমাননার কথা। তারপর সেখানকার ওসি এসেছেন। ওসির বগলের নিচে কোরআন শরিফ। সেখানেই ভিডিও করে কিছু লোক তা ফেসবুকে ছাড়ছে। পুলিশ এমন করে কখনো দেখেছেন? ওসি একা গেলেন কেন? পুলিশ পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের কাছে গাড়ি ছিল না। সরকার পুলিশকে এত কিছু দিচ্ছে, অথচ কুমিল্লা সদরে কেউ গাড়ি পেল না। সিএনজি নিয়ে ওসি একা চলে গেলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ পুরো এলাকা ঘেরাও করে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না, কিন্তু ওইখানের পুলিশ এসব করেনি। তারা বলেছে ভিডিও আছে। সাংবাদিকও সাহস করে ভিডিও দেখতে চান না। কথা বললেই যদি বলে তুমিও এতে জড়িত। সম্ভবত ২০ হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা শেষ হবে কবে? মামলা করে সরকার ঘটনা বের করতে চায়?
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘জাতিসংঘ চিঠি লিখে জানায়, বাংলাদেশে হিন্দুদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। উনারা (সরকার) বলছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। হিন্দু মুসলমানের বুকে, মুসলমান হিন্দুর বুকে ছুরি বসিয়েছে—এমন ঘটনা নেই। মানুষকে উত্তেজিত করা হয়েছে। সংঘর্ষে মানুষ মারা গেছে। জানতে চাই, এ সংঘর্ষ হলো কেন?’
সরকার সামনে আবার ভোট ভোট খেলবে, সেই চেষ্টা করছে। তবে এবার বিপদ আছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এবার সব হিন্দু ভাইয়েরা বের হয়ে বলেছেন, আমরা আওয়ামী লীগের আমলে নিরাপদ নই।’
স্বাধীনতার সময় দেশে কত হিন্দু ছিল, এখন সংখ্যাটা কমে কত হয়েছে—সেই প্রশ্ন তোলেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ ভাগ হিন্দু ভারতে গিয়ে থাকলে তাদের সম্পত্তি এখন কাদের দখলে? শতকরা ৯০ ভাগ সম্পত্তিই দখল করেছেন আওয়ামী লীগের লোকেরা। তাঁরাই হিন্দুদের অত্যাচার করেন, ভয় দেখান। বিএনপি–জামায়াতে ইসলাম হামলা করবে, তার থেকে ভারতে চলে যাওয়াই ভালো বলতে থাকে। জমি দখল করাই মূল উদ্দেশ্য।
মাহমুদুর রহমান পরিবেশদূষণ, খাদ্যদ্রব্যের দামবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এটাই সত্য, মানুষের পেটে এখন ক্ষুধার আগুন। সব জিনিসের দাম বেড়েছে। ১০ টাকা করে চাল খাওয়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের আমলে মোটা চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকা আর ভালো চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এক মণ ধান বেঁচে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে হয়। সেই দেশে সরকার উন্নয়নের কথা, ভালো ভালো কথা শোনায়, বাস্তবে যার কোনো ভিত্তি নেই।
পরিবেশদূষণ প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, দেশের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। নদী, নালা, খাল, লেক দখল করে ক্ষমতাসীনেরা ঘর বাড়ি বানাচ্ছে।
পত্রিকায় প্রথম পাতায় সেসব খবর ছাপা হচ্ছে। সারা দেশের চিত্র একই। ঢাকা সব থেকে দূষিত নগর। এখানে নিশ্বাস নেওয়া যায় না। বায়ুদূষণে ঢাকা মহানগরের মানুষের আয়ু কমে যাচ্ছে।
মাহমুদুর রহমান সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, বর্তমান সরকারের আমলে কোনো মানুষ ভালো থাকতে পারছে না।