মাঠের নেতাদের মনোভাব বুঝতে চায় বিএনপি

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পৌনে চার শ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিএনপি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি’ নিয়ে আলোচনার এক সপ্তাহের মধ্যে এবার নিজ দলের নেতা–কর্মীদের মনোভাব বুঝতে সভা ডাকল বিএনপি। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর হঠাৎ করে বড় পরিসরে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদকীয় পদের নেতাদের নিয়ে ডাকা এই সভা কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এই সাংগঠনিক সভা আন্দোলনের কৌশল ঠিক করতে, নাকি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে, তা নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আপাতত নির্বাচন নয়, একটি বৃহত্তর আন্দোলনের চিন্তা থেকেই সাংগঠনিক সভা আহ্বান করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এ সভায় দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পৌনে চার শ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভায় মাঠপর্যায়ের নেতাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করবেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। আমন্ত্রিত নেতাদের সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও সভায় উপস্থিত থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আন্দোলন করি না কী করি, সেটা পরের ব্যাপার। সরকার আগাম নির্বাচনের বাতাস দিয়ে দিয়েছে। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের কোনো ইন্টারেকশন নেই। মাঠের চিত্র কী, মাঠের নেতা–কর্মীদের মনোভাব কী, তা জানা দরকার। এসব অবগত হয়েই তো আমাদের এগোতে হবে।’

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে থাকায় এবং অসুস্থতার কারণে স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্যসহ আমন্ত্রিত ৭০-৭৫ জন নেতা আজকের সভায় উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এই সভার বিশেষ দিক হচ্ছে, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এই প্রথম বড় আকারের কোনো সাংগঠনিক সভা হতে যাচ্ছে। লন্ডনপ্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। মা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির নেতাদের সভা হচ্ছে।

আমরা আন্দোলন করি না কী করি, সেটা পরের ব্যাপার। সরকার আগাম নির্বাচনের বাতাস দিয়ে দিয়েছে। মাঠের চিত্র কী, মাঠের নেতা–কর্মীদের মনোভাব কী, তা জানা দরকার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর জানায়, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে আজ বেলা সাড়ে তিনটায় এই সভা শুরু হবে। আগামীকাল বুধবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, সহসম্পাদকদের সঙ্গে সভা হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার সভা হবে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে। আমন্ত্রিতদের সভা শুরুর আধঘণ্টা আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সভার বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংগঠনিক সভায় আমার মনে হয় আন্দোলনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।’ তবে তিনি আজ মঙ্গলবারের সভায় অংশ নিতে পারছেন না। তার কারণ, গতকাল সোমবার তাঁর করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ৫৯২ জন। তাঁদের মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে ১৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫ জন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন ৮২ জন। এ ছাড়া ১ জন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, ৭ জন যুগ্ম মহাসচিব, ১০ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আছেন ১৬১ জন। তাঁদের মধ্যে স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিলে ১০ জন মারা গেছেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার চার দিন আগে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের বৈঠক হয়। এরপর দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে তারেক রহমান বিভিন্ন সময়ে পৃথকভাবে বৈঠক করলেও এবারের মতো এমন ধারাবাহিকভাবে নির্বাহী কমিটির নেতাদের নিয়ে কোনো সভা করেননি।

৯ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন। ওই সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিএনপিকে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি না করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থাকতে এক লাখ অনলাইন অ্যাকটিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরিও কাজ শুরু করছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য ও কার্যক্রমে রাজনীতিতে হঠাৎ করেই নির্বাচনী আলোচনা শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় রাজনৈতিক দলগুলোও নানা কর্মসূচি নিচ্ছে।

তিন দিনব্যাপী সভার বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। অনেক কাজ ছিল, করতে পারিনি। এখন সব চালু হয়েছে, প্রয়োজনীয় কাজগুলো শুরু করছি। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব, রাজনীতি নিয়ে কথা বলব।’