১২ দিন পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, বাধা দেয়নি ছাত্রলীগ

ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

প্রায় ১২ দিন পর আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পেরেছে ছাত্রদল। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে। ক্যাম্পাসে ঢুকতে ছাত্রদলকে বাধা দেয়নি ছাত্রলীগ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হয়।

ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ছিল। অন্যদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফটকের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের একদল নেতা-কর্মী।

নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান।

আরও পড়ুন
স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

পরীক্ষা শেষে কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে বের হওয়া ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানায় ছাত্রদল। তারা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দেয়। ১৫ মিনিটের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।

কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সরকার বা ছাত্রলীগবিরোধী কোনো স্লোগান দেননি। আর ছাত্রদলের আজকের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগও কোনো বাধা দেয়নি। তবে ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, আজও ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ বজায় রয়েছে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, গ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বের হতে শুরু করেন। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের দিকে রওনা দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ বাধা দেয়। তাঁদের বলা হয়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফুল-কলম দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বারণ রয়েছে। তখন ছাত্রদলের এক নেতা মুঠোফোনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যেতে দেয় পুলিশ।

আরও পড়ুন
মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ বাধা দেয়
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যাওয়ার পর ভবনের পাশের ফুটপাতে রজনীগন্ধা ফুল ও কলম হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সেখান দিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তেমন আসছিলেন না। তখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তাঁরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলের ‘সুশীতল ছায়াতলে’ আসার আমন্ত্রণ জানান।

দুপুর পৌনে একটার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যে যাঁর মতো চলে যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদল শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন। আমাদের হাতে কলমই থাকে। কলম দিয়েই আমরা প্রতিবাদ করি। আমাদের হাতে কখনোই অস্ত্র ছিল না। ছাত্রদল অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে না। অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে ছাত্রলীগ। গত কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যকালে সংগঠনের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এই কর্মসূচি পালনে আমরা কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ি।’

আরও পড়ুন
একপর্যায়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যেতে দেয় পুলিশ
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আমানউল্লাহ আমান আরও বলেন, ‘আজকে ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তবে যতই ভীতিকর পরিস্থিতি থাকুক না কেন, আমরা আমাদের অধিকার চর্চার জন্য প্রাণের ক্যাম্পাসে আসবই। আমরা চেষ্টা করেছি, ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। ছাত্রলীগ তাদের সশস্ত্র অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি।’

ছাত্রদলের বক্তব্যের বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসকের সেবাদাস ছাত্রদলে এসব মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তাদের লক্ষ্য ছাত্ররাজনীতি নয়। ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীসহ তাঁদের অভিভাবকদের প্রয়োজন, প্রত্যাশায় ও সংকটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পাশে থেকেছে। এটি নতুন দিনের ছাত্ররাজনীতির প্রমাণ বলে আমরা মনে করি। শিক্ষার্থীবান্ধব ও ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী কর্মসূচি দেওয়ার জন্য অভিভাবকেরা ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন। অভিভাবকেরা নিজের ঘরের মতো পরিবেশে এখানে অবস্থান করেছেন। এসব কারণেই কি ছাত্রদল একে ভীতিকর পরিবেশ বলছে?’

আরও পড়ুন
ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানায় ছাত্রদল
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ কঠোর অবস্থান নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে দফায় দফায় হামলার শিকার হয় ছাত্রদল। ১২ দিন ধরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। তারা ক্যাম্পাস থেকে কার্যত ‘বিতাড়িত’ ছিল।

গত ২৯ মে এক মানববন্ধনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ক্যাম্পাসে আসতে হলে ছাত্রদলকে ক্ষমা চাইতে হবে।

২৬ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সহিংসতার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে এলেই ছাত্রদলকে প্রতিহত করা হবে।’

তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুর ক্যানটিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের কণ্ঠে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে ঢোকার বিষয়ে কিছুটা নমনীয় সুর লক্ষ করা যায়। এর কিছুটা প্রতিফলন দেখা গেল আজ।

রজনীগন্ধা ফুল হাতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ছাত্রলীগের কর্মসূচি

ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি ছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত শিক্ষার্থী-সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে বিনা মূল্যে ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’-এর ব্যবস্থা, ছাউনির মাধ্যমে অভিভাবকদের বিশ্রামের সুব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেওয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ারসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র গঠন, মাস্কের বিতরণ, কলমসহ আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রয়োজন সাপেক্ষে পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুব্যবস্থা।