রাকসুর ভিপি পদে এবার নারী প্রার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন এক নারী শিক্ষার্থী। তাঁর নাম তাসিন খান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক।
রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১৪ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তাতে বিজয়ীদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিপি ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে কোনো নারী ছিলেন না।
কোনো নারী প্রার্থী হয়েছিলেন কি না জানতে যোগাযোগ করা হয় ১৯৮৮-৮৯ মেয়াদের রাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাগীব আহসানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে এযাবৎ কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে দাঁড়াননি।
যদি মাঠ ছেড়ে দিই, তাহলে বিষয়টা আসলেই রাজনৈতিক হয়ে উঠবে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হতে এই পদে প্রার্থী হওয়া।তাসিন খান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। রাকসু যাত্রা শুরু করে ১৯৬২ সালে। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচন হয় ১৯৮৯ সালে। ওই বছর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ (এখন বিএনপি নেতা)। জিএস হয়েছিলেন রুহুল কুদ্দুস (জাসদ ছাত্রলীগ নেতা)।
রাকসুর ভোট গ্রহণ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়েছে ২৪ আগস্ট থেকে। ৩১ আগস্ট শেষ হবে। রাকসুর নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। রাকসুর ভোটে কত ফরম বিক্রি হয়েছে, তা আলাদাভাবে জানাতে পারেনি কমিশন।
রাকসুর ভোটে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো প্যানেল ঘোষণা হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই কোন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, প্রার্থিতা ঘোষণা করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে নারী প্রার্থী তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান ২৬ আগস্ট মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি একটি প্যানেল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
কোনো নারী প্রার্থী হয়েছিলেন কি না জানতে যোগাযোগ করা হয় ১৯৮৮-৮৯ মেয়াদের রাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাগীব আহসানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে এযাবৎ কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে দাঁড়াননি।
তাসিন খান বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি সাধারণ জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ এসেছিল। তবে তিনি যোগ দেননি। রাকসু নির্বাচন রাজনৈতিক হয়ে ওঠা দেখে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ, তিনি মনে করেন, ছাত্র সংসদের নির্বাচন রাজনৈতিক হয়ে ওঠা ঠেকাতে হবে।
তাসিন বলেন, ‘যদি মাঠ ছেড়ে দিই, তাহলে বিষয়টা আসলেই রাজনৈতিক হয়ে উঠবে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হতে এই পদে প্রার্থী হওয়া।’
ছাত্রীদের চেষ্টা করেও নির্বাচনে আনা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তাসিন খান আরও বলেন, ‘অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী আছে, যারা বিতর্ক ও সাহিত্যে ভালো। তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঝিয়েও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য রাজি করাতে পারিনি। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে ফেলেছে, এটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।’
কারণ কী জানতে চাইলে তাসিনের মত, নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিংয়ের (ডিজিটাল জগতে হেনস্তা) শিকার হওয়ার বড় আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। নারী প্রার্থীদের সংখ্যা সন্তোষজনক নয় এবং তাঁদের ভোট কত শতাংশ পড়বে, সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে।
রাকসুতে কতজন নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা বোঝা যাবে মনোনয়নপত্র দাখিল হওয়ার পর। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর।
রাকসুতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৯২। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩৫১ ছাত্র ও ৯ হাজার ৭৪১ ছাত্রী ভোটার। অর্থাৎ ছাত্রী ভোটারের হার ৩৯ শতাংশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সাহেদ জামান ১৯৮৯ সালের রাকসু নির্বাচনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অতীতের নির্বাচনে তিন থেকে চারটি প্যানেল হতে দেখা গেছে। প্রতিটি প্যানেলেই কয়েকজন করে ছাত্রী থাকতেন। এবার খুব বেশি প্রার্থী দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছরে একপেশে রাজনীতির কারণে ছাত্রীরা অনাগ্রহী হয়ে গেছেন। আবার এখন প্রার্থী হলে সাইবার বুলিংয়ের আশঙ্কা আছে। এ কারণে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে।