ইউরোপ জানত যে ইলেকশনে আমিই জিতে আসব: শেখ হাসিনা

মিউনিখ সফরের বিষয়ে রাজধানীর গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাছবি: বাসস

ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইউরোপসহ প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যেমন রাষ্ট্রীয় একটা সম্পর্ক আছে, সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে সুবিধা হয়েছে। যে কারণে ইলেকশন নিয়ে আমাদের কেউ কোনো কথা বলেনি। তারা নিজেরাই জানত যে ইলেকশনে আমিই জিতে আসব। যারা আমাকে চায়নি, তাদের মাধ্যমেই কথা ওঠে, প্রশ্ন ওঠে।’

জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন

জার্মানির মিউনিখের এই নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সে-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সব আলোচনাই দ্বিপক্ষীয় হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘একটি দেশে নির্বাচনের রেজাল্ট ডিক্লেয়ার করতে ১২ থেকে ১৩ দিন সময় লাগলেও তাদের ইলেকশন ফ্রি-ফেয়ার। আর বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাত্র ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটি ফ্রি-ফেয়ার না। সুতরাং এই রোগের কোনো ওষুধ আমাদের কাছে নেই। শক্তি আমাদের জনগণ, আমি সেটাই বিশ্বাস করি।’

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করতে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়েছে এবং এখনো সরকার গঠন হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘দেশটি এখন তো বোধ হয় একটা সমঝোতায় এসেছে, কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে কী হবে। এ রকম যদি আমাদের দেশে হতো, তাহলে বোধ হয় সমালোচনাকারীরা খুশি হতো। তেমন হয়নি বলে অনেকের মন খারাপ। তবে মন খারাপ ভালো হয়ে যাবে।’

আরও পড়ুন

ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে

নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে দুর্ভিক্ষের ঘটানোর আশঙ্কা আছে। এ-সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র ছিল, ষড়যন্ত্র আছে। ষড়যন্ত্র বারবার হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন যেন না হয়, সে জন্য বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা, তার আগের সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস। এগুলো হঠাৎ করা না, পরিকল্পিত। যারা নির্বাচন বানচালের পক্ষে, তারা যখন নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না বলে মনে করল, তখন চক্রান্ত হলো জিনিসপত্রের দাম বাড়াবে। জনগণ তখন ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। এই চক্রান্ত আছে।

গতকাল বৃহস্পতিবারের বৃষ্টির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে কালকে বৃষ্টি হলো। ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ। মাঘের শেষে বৃষ্টি হলো, ফাল্গুনের শুরুতে বৃষ্টি হলো। খাদ্যপণ্য উৎপাদনে অসুবিধা হবে না।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা আছে, তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলাম। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ গণমানুষের কথা বলে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারির ডিক্টেটরদের পকেট থেকে তৈরি হয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দল তৈরি হয়, তাদের মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। তারা চায় কেউ তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে যেয়ে তারা ২০০৮-এর নির্বাচনে ধরা খায়। এর পর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিপক্ষ জ্বালাও-পোড়াও করে যাচ্ছে। রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয়, তবে জনগণের কল্যাণেই কাজ করতে হবে।

টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই প্রসঙ্গ

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ির নিবন্ধন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে বলেন, তিনি টানা কিছুদিন টাঙ্গাইল শাড়িই পরেছেন। কারণ, এটা বাংলাদেশেরই শাড়ি।

আজ সংবাদ সম্মেলনে তাঁর নিজের পরনে যে শাড়িটি আছে, সেটি ফ্রেঞ্চ শিফন নয়, সেটির তিনি নাম দিয়েছেন শফিপুর শিফন, যা আনসার-ভিডিপির সদস্যদের হাতে তৈরি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ট্রাফিক লাইট সচল করতে বলা হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সড়কে আগের মতো চাপ নেই। যানজট অনেকটা সহনশীল। তাই সড়কে যেন গাড়িগুলো চলমান থাকে, তাই ট্রাফিক লাইট-পদ্ধতি সচল করতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে যানজট নিরসন-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল হয়েছে। কিছু এলাকায় এখনো আছে। এক্সপ্রেসওয়ে পুরোটা হয়ে গেলে আরও কম আসবে। এ ছাড়া পুরো ঢাকায় আরও পাঁচটি মেট্রোরেল হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘গতকালকে আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) সঙ্গে কথা বলেছি, এখন ট্রাফিক লাইট সচল করে দিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য। যেহেতু এখন আগের মতো অতিরিক্ত চাপ নেই। তাই লাইটের পদ্ধতিতে চলে গেলে সময়টা কম করে বারবার খুলে দিলে গাড়িগুলো যদি চলমান থাকে, তাহলে অনেকক্ষণ বসে আছে, সেই অনুভূতি হবে না।’

মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে সমালোচনাকারীদের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু কথা বলা বাঙালির চরিত্র। একটি দলই আছে, যাদের কিছু ভালো লাগে না। কিছু হলে তখন আবার উপভোগ করে।’