৮ মাসের সংসদ সদস্য হতে আ জ ম নাছির ও আবদুচ ছালামের দৌড়ঝাঁপ

বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে আর বড়জোর আট মাস। এ অল্প সময়ের জন্য চট্টগ্রামের একটি আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য হতে মরিয়া আওয়ামী লীগের দুই ডজনের মতো নেতা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে। তাঁরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম।

কোন্দলে জর্জরিত নগরের রাজনীতিতে এই দুজন আবার দুই মেরুর। এ নিয়ে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে গত সোমবার ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথম দিনেই ২৫ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে আবদুচ ছালাম রয়েছেন। আ জ ম নাছির ফরম সংগ্রহ করেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা বলছেন, চট্টগ্রাম-৮ তাঁর নির্বাচনী এলাকা নয়। তিনি মূলত চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনের। কিন্তু ওই আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সংসদ সদস্য।

এ আসনে মহিবুল হাসানকে বাদ দিয়ে আ জ ম নাছিরকে ভবিষ্যতে বিবেচনা করার সম্ভাবনা খুবই কম। এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-৮ আসনকে বিকল্প বিবেচনা করছেন নাছির উদ্দীন। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সবুজসংকেত না পেলে ফরম কিনবেন কি না, সেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন নাছির উদ্দীন।

প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে থাকা নাছির-ছালামের দ্বন্দ্ব অনেক পুরোনো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, এ আসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র নাছির উদ্দীন বা চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম—দুজনের যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে একে অপরের বিরোধিতা করবেন।

কারণ, আবদুচ ছালাম হচ্ছেন চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবং নগর সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘরানার। আর নাছির উদ্দীন দীর্ঘদিন ধরেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত।

বড় দল, অনেকেই প্রার্থী হতে চাইবেন। তবে মনোনয়ন বোর্ড সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই করবে
মাহবুব উল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী কেন্দ্রীয় নেতা হয়েছেন, পেয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। এখনো পুরোনো দ্বন্দ্ব বহাল রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কাউকে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে উন্মুক্ত রাখার বিষয়টিও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের ভাবনায় আছে।

সূত্র বলছে, অল্প সময়ের জন্য কাউকে মনোনয়ন দিয়ে কোন্দল বাড়ানো ঠিক হবে না। বিএনপি যেহেতু ভোটে নেই, সে ক্ষেত্রে উন্মুক্ত রাখলে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি জয়ী হয়ে আসতে পারবেন। ভবিষ্যতের জন্য তা আরও ভালো হবে।

এ ছাড়া দলাদলির কথা বিবেচনা করে তৃতীয় কাউকে বিবেচনা করারও সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রীর ভাগ্য খুলে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-‌বোয়ালখালী) আসনটি শূন্য হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে। তিনি মারা যান গত ৬ ফেব্রুয়ারি।

মোছলেম উদ্দিন ২০২০ সালে উপনির্বাচনে এ আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এর আগে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রয়াত মইন উদ্দীন খান বাদল। তিনি ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

আগামী ২৭ এপ্রিল এ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মাধ্যমে এ আসনে ৪ বছর ৩ মাসের ব্যবধানে তৃতীয়বার ভোট হতে যাচ্ছে।

মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রীও চান মনোনয়ন

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদের মধ্যে জাসদের সাবেক সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানও আছেন। তিনি নিজের পরিচয় হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য উল্লেখ করেন।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা সুকুমার চৌধুরীও প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখিয়ে ফরম নিয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা।

নাছির ও ছালাম যা বললেন

আবদুচ ছালাম নিজের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ওই আসনের বাসিন্দা। আগেরবারও তিনি দাবিদার ছিলেন। এবার তাঁকে দল বিবেচনা করবে বলে মনে করছেন।

অন্যদিকে আ জ ম নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ফরম সংগ্রহ করার আরও এক দিন সময় আছে। তিনি ভাবছেন, সিদ্ধান্ত নিলে সবাই জানতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো দলের দায়িত্বশীল নেতা। শুধু ফরম নেওয়ার জন্য নেওয়ার মানে হয় না। এ জন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, অল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য এত আগ্রহের মূল কারণ হচ্ছে, এখন মনোনয়ন পেলে পরবর্তী নির্বাচনে বাদ দেওয়া যাবে না।

এ ছাড়া বিএনপি ভোটে না থাকায় উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মানেই জয় নিশ্চিত। সঙ্গে পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার অনেকটাই নিশ্চয়তা থাকে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কোন্দলের কথা বিবেচনা করেই প্রয়াত মোছলেম উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। এবারও হেভিওয়েটদের বাইরে কাউকে দেওয়ার বিবেচনা করা হতে পারে।

চট্টগ্রাম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, আ জ ম নাছিরের বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুটা বিরাগভাজন। এ জন্য ২০২১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। রেজাউল করিম চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হন। এমনকি আ জ ম নাছির মেয়র থাকা অবস্থায় অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হলেও তাঁকে দেওয়া হয়নি। এখন তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।

ভবিষ্যতে তাঁকে দলীয় পদের ব্যাপারেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হতে পারে। অন্যদিকে আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম-৮ আসনে গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে কয়েকবার চেষ্টা করেন।

সরকার তাঁকে সিডিএ চেয়ারম্যান পদে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়। এবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার খায়েশ পূরণ হতে পারে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করেন।

তবে সিডিএর চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও নগরীতে প্লট বরাদ্দে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে, যদিও তিনি এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে দলের মনোনয়ন সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, বড় দল, অনেকেই প্রার্থী হতে চাইবেন। তবে মনোনয়ন বোর্ড সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী বাছাই করবে।