তৃণমূলে দ্বন্দ্ব মেটাতে উদ্যোগ আওয়ামী লীগের

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

তৃণমূলে বিভেদ দূর করতে দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর যেসব ইউনিটে সম্মেলন হয়েছে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেগুলোতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত শনিবার রংপুর এবং রোববার চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। ৪ এপ্রিল খুলনা এবং ২১ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

দলটির সূত্র বলছে, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের বৈঠকে অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীকে সমর্থন করা না–করার বিষয়টিই ঘুরেফিরে এসেছে। এ থেকে দলের নীতিনির্ধারকদের মত হচ্ছে—মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন এবং অপূর্ণাঙ্গ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে দিলে বিভেদ কিছুটা কমে যাবে।

গত শনিবার রংপুর এবং রোববার চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। ৪ এপ্রিল খুলনা এবং ২১ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচন এবার দলীয় প্রতীকে না হলেও দল থেকে কোনো একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে তৃণমূল থেকে। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে, কেন্দ্রীয়ভাবে বা কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া ঠিক হবে না। স্থানীয়ভাবে কেউ একক প্রার্থী ঠিক করতে পারলে তাতে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করবে না।

এর আগে রোজার শুরুতে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। এই বৈঠকেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে পুনর্গঠনের সুপারিশ এসেছে।

২০১৯ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনের আগে থেকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলন শুরু হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের আগে সব জেলা-উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করা যায়নি। এর মধ্যে নতুন করে অনেক জেলা-উপজেলা কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় নতুন করে সম্মেলন শুরুর মাধ্যমে দলকে সংগঠিত করা হবে।

আরও পড়ুন

গত বছরের শুরুতে সারা দেশে সম্মেলন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচির কারণে আওয়ামী লীগ সারা দেশে দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম স্থগিত করে। দলটি ওই সময়ে টানা রাজপথে মিছিল-সমাবেশ নিয়ে বিরোধী দলকে চাপে রাখার চেষ্টা চালায়। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর বিরোধী দল এখনো রাজপথের কর্মসূচিতে জোর দেয়নি। এ অবস্থাকে সংগঠন গোছানোর সময় বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা।

জেলা ও মহানগর মিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে নয়টি জেলায় সম্মেলন হয়নি। সম্মেলন না হওয়ার তালিকায় চাঁদপুর জেলা ও চট্টগ্রাম মহানগর রয়েছে। রোববার চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

এ ছাড়া যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের ওয়ার্ড এবং থানা কমিটিগুলো হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন সদস্যের জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক মারা গেছেন। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।

আরও পড়ুন

দলটির সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হচ্ছে, সারা দেশের মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা। একই সঙ্গে আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সব সাংগঠনিক ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা। সে জন্য ঈদের পর থেকেই সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। উপজেলা নির্বাচনের সময় দলীয় সম্মেলন করা কঠিন। তবে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ করা যাবে। উপজেলা নির্বাচনের পর সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ দেওয়া শুরু হতে পারে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে জুনের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। এর মধ্যে যেসব ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেগুলোও সম্পন্ন করা হবে। দলীয় বিভেদ সম্পর্কে এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। পদ-পদবির জন্য প্রতিযোগিতা থাকবেই। এতে মনোমালিন্যও হতে পারে। কেন্দ্রের কাজ হবে তৃণমূলে দূরত্ব কমানো এবং মনোমালিন্য দূর করা।

আরও পড়ুন