মামলা নিয়ে যত চিন্তা হেফাজতের 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

ঝুলে থাকা দুই শতাধিক মামলা এবং কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তি না পাওয়ার বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের কাছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২৮৫টি মামলা তদন্ত বা বিচারপ্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ ছাড়া এখনো ৭ জন আলোচিত আলেমসহ অন্তত ১৯ জন কারাবন্দী আছেন।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারপ্রধানসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবং চলতি মাসের ১৬ জানুয়ারি সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠকেও এ দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন

ওই সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে মামলা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য হেফাজতের কাছে দুজন প্রতিনিধি চাওয়া হয়। সেখানেই যুগ্ম মহাসচিব মুহিউদ্দিন রাব্বানী (তাঁর অবর্তমানে মীর ইদ্রিস) ও ঢাকা মহানগর কমিটির সেক্রেটারি কেফায়েতুল্লাহ আজহারীর নাম দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো বৈঠক হয়নি।

মুহিউদ্দিন রাব্বানী গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব মামলার কাগজপত্র ও সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। প্রস্তুতি শেষ করে আমরা (সরকারের সঙ্গে) বৈঠক করতে যাব।’

এরই মধ্যে আলোচনা হচ্ছে যে হেফাজতে ইসলামের নেতারা সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বৈঠকে মামলা প্রত্যাহার এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিনিময়ে রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়েছেন। যদিও হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলছেন, কোনো বৈঠকেই তাঁরা এ ধরনের কোনো মুচলেকা দেননি বা সরকারও এমন কিছু চায়নি।

এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি হেফাজত সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছে বলে কয়েকটি গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা অবান্তর বলে নাকচ করে দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কারও কাছে কোনো রকম মুচলেকা দেয়নি। হেফাজতের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সাক্ষাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যা, ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির বিষয়ে সংসদে আইন পাস করা, কারাবন্দী আলেম-ওলামাদের মুক্তি ও কাদিয়ানিদের তৎপরতা বন্ধ করাসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়। সেখানে কোনো বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি, মুচলেকার প্রশ্নই আসে না।’

অবশ্য গত বছরের জুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া এক চিঠিতে সরকার ‘বিব্রত’ হয়, এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি চেয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, কারাবন্দী নেতা-কর্মীরা মুক্তি পেলে পরে তাঁরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হবেন না, যাতে রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।’

হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালের সহিংসতার ঘটনায় এখনো সংগঠনের ১৯ জন নেতা-কর্মী জেলে আছেন। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, অর্থ সম্পাদক মুনির হুসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াৎ হোসেন রাজি, কেন্দ্রীয় নেতা নাছির উদ্দিন মনির, হারুন ইজহার, নূর হোসাইন নূরানী, আজহারুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া শিশু আলেম হিসেবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ আরও ১১ জন কারাগারে আছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান ও সহিংসতার ঘটনায় হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ১৫১টির মতো মামলা হয়। এরপর ২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। এসব মামলা এখনো তদন্তাধীন।

হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলে আসছেন, প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এটি একটি অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। কোনো সময়েই হেফাজতে ইসলাম নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।