বুকে আরও সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে: ফখরুল
বিএনপির নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বুকে আরও সাহস ও শক্তি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে। জনগণ রাস্তায় নেমে যে আওয়াজ তুলছে, তাকে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এই সরকারের নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে গণমিছিল শেষে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপির নেতা–কর্মীরা পৃথক স্থান থেকে গণমিছিল করে নয়াপল্টনে এসে সমবেত হন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বক্তব্য দেওয়ার পাঁচ মিনিট আগেই নয়াপল্টনে এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় সমাবেশে আগত নেতা–কর্মীদের কেউ কেউ আশপাশের দোকানে গিয়ে অবস্থান নেন। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেই বক্তব্য শোনেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর মাথার ওপর একটি ছাতা ধরে রাখা হয়। তবে বৃষ্টির তীব্রতা বেশি থাকার তিনিও ভিজে যান। সে অবস্থার মধ্যেই তিনি বক্তব্য দেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গত দুই দিন আগে বলেছেন, এখানে নাকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হতে পারে। সেই আক্রমণ তাঁরাই করবেন। আওয়ামী লীগ এই আক্রমণ করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বুকে আরও সাহস ও শক্তি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’
এ দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারকে না জানিয়ে দিয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা শেখ হাসিনার সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সব কিছু করছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে আটক করে রেখেছে। অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ দল-মতনির্বিশেষ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে।
বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে সমাবেশে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কষ্ট করছেন, সামনে আরও কষ্ট হবে। কিন্তু এই সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে আমরা এ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
এক দফা দাবি তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের আর বেশি সময় নেই। জনগণ জেগে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের একটি মানুষেরও স্বাধীনতা থাকবে না। তাই তাদের বিদায় করতে হবে। লজ্জা থাকলে এই সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিত।
বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি লগিবইঠা দিয়ে আন্দোলন করে না। তবে আঘাত করার চেষ্টা করা হলে পাল্টা আঘাত করা হবে।
সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর উপস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে ঢাকার বাইরে থেকে নেতা–কর্মীরা আসেননি। সমাবেশে যাঁরা আছেন, সবাই ঢাকা মহানগরের নেতা–কর্মীরা। আপনারা রাস্তায় থাকলে পুলিশের কাছে এত গুলি নেই যে গুলি করবে।’ সমাবেশের মঞ্চে লড়াই বাদ দিয়ে রাজপথের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশের আগে বেলা দুইটা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতা–কর্মীরা কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে তাঁরা ঘণ্টাখানেক অবস্থান নিয়ে মিছিলে স্লোগান দেন। এরপর মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে এসে সমাবেত হন।
আর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নেতা–কর্মীরা রাজধানীর পূর্ব রামপুরা এলাকায় জড়ো হন। পরে মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে থেকে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গণমিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে এসে অবস্থান নেন।