রাজশাহী ও খুলনায় ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে আ.লীগের জোর প্রচারণা

খুলনায় পাঁচজন, রাজশাহীতে চারজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খুলনায় ভোট ১২ জুন, রাজশাহীতে ২১ জুন।

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের গণসংযোগ। গতকাল বিকেলে রাজশাহীর বালিয়াপুকুর এলাকায়
ছবি: শহীদুল ইসলাম

খুলনা ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের বিপরীতে এবার শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তারপরও নৌকার প্রার্থীরা এ নির্বাচনকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। দিনরাত এক করে তাঁরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে প্রধান চ্যালেঞ্জ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা। এ লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্ন ভোট দিতে পারবেন বলে আশ্বস্তও করছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করছে। ১২ জুন খুলনায়, আর ২১ জুন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনায় পাঁচজন ও রাজশাহীতে চারজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ দলের চেয়ে ব্যক্তির ওপর বেশি নজর রাখে। আমরা চাইছি নগরের মধ্যে থাকা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ভোটারের কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৌঁছে যেতে।
তালুকদার আবদুল খালেক

খুলনায় খালেকের জোর প্রচারণা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগ–মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক
প্রথম আলো ফাইল ছবি

খুলনায় নির্বাচনী প্রচারে সবচেয়ে সরব আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও প্রচারণায় নেমেছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল সাড়ে আটটার দিকে গণসংযোগে বের হন প্রার্থী নিজে। সারা দিনই ঘুরছেন কোনো না কোনো ওয়ার্ডে।

শক্ত অবস্থানের পরও ব্যাপক প্রচারণার বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা। বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখা যাচ্ছে ভোটাররা কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। এতে দল ও সরকারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দিনরাত প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্ন ভোট দিতে পারবেন—সেই বিষয়টি বোঝানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

তালুকদার আবদুল খালেক প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে মাঝরাত অবধি গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খালিশপুর বৈকালী বাজার থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তালুকদার আবদুল খালেক। বেলা ১১টায় খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অভিভাবক সমাবেশে যোগ দেন। দুপুর ১২টায় দৌলতপুরের অ্যাডামস মিলনায়তনে অ্যাডামস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দুপুরের খাওয়া ও বিশ্রাম শেষে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ চালান খালেক।

প্রতিদ্বন্দ্বী চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে প্রচারসহ সব দিক থেকে এগিয়ে আছেন সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। অন্য তিন মেয়র প্রার্থীও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা সকাল-বিকেল লিফলেট নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তবে ব্যানার-পোস্টারসহ মাইকিংয়ে পিছিয়ে আছেন তাঁরা।

কেন এত গণসংযোগ—জানতে চাইলে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ দলের চেয়ে ব্যক্তির ওপর বেশি নজর রাখে। আমরা চাইছি নগরের মধ্যে থাকা ৫ লাখ ৩৫ হাজার ভোটারের কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৌঁছে যেতে।’ ভোটারদের কেন্দ্রে নেওয়াও একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। সেই জায়গা থেকে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়েও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানান এই মেয়র প্রার্থী।

প্রচার চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী শফিকুল ইসলাম। গতকাল খুলনার খালিশপুরে
ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলামও দিনরাত প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত। তিনিও প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে গণসংযোগে বের হচ্ছেন। প্রতিদিন একটি থেকে দুটি ওয়ার্ডে গণসংযোগ করছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। তাঁর ইশতেহারে নগর ও নগবাসীর উন্নয়নে ২২টি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে।

আরও পড়ুন

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নগরজুড়ে জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনকে ঘিরে প্রচার-প্রচারণায় সাংগঠনিক পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছে দলটি। নগরজুড়ে দলটির মেয়র প্রার্থী আবদুল আউয়ালের পোস্টার চোখে পড়ে। প্রচার মাইকেও হাতপাখা প্রতীকে ভোট চাওয়া হচ্ছে। গতকাল বিকেলে নগরের দৌলতপুর শহীদ মিনার এলাকায় পথসভায় আবদুল আউয়াল বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই নগরকে বাঁচাতে আর সময়ক্ষেপণ করার অবকাশ নেই। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে খুলনাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে।

জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেনের প্রচার-প্রচারণা চলছে সীমিত পরিসরে। নগরে বিচ্ছিন্নভাবে তাঁর কিছু পোস্টার দেখা যায়। তবে বেশ কিছু প্রচার মাইকে তাঁর প্রচারণা চলছে। গতকাল তিনি নগরের ২৭ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দোলখোলা, মিস্ত্রীপাড়া, নিরালা ও গল্লামারী এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন।

খুলনায় একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমানও প্রচারণার কাজে ব্যস্ত। গতকাল সকালে তিনি নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন। বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান তিনি।

রাজশাহীতে প্রচারে এগিয়ে লিটন

প্রতিদ্বন্দ্বী চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে প্রচারসহ সব দিক থেকে এগিয়ে আছেন সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। অন্য তিন মেয়র প্রার্থীও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা সকাল-বিকেল লিফলেট নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তবে ব্যানার-পোস্টারসহ মাইকিংয়ে পিছিয়ে আছেন তাঁরা।

রাজশাহীতে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে ২ জুন। এরপর এক দিনেই পোস্টার, ব্যানার সাঁটিয়ে প্রচারের মাঠ নিজের কবজায় নেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। শহরের এমন কোনো স্থাপনা নেই, যেখানে তাঁর পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়নি। ৩০টি ওয়ার্ডে এই প্রার্থীর ৩০টি প্রচার মাইকও চলছে। বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ওরফে স্বপনের লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলমের হাতপাখা, জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ারের গোলাপ ফুল প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার নেই বললেই চলে।

গতকাল নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করছেন। গতকাল সভা শেষ করে সন্ধ্যায় তিনি প্রচারণায় বের হন। একটি ট্রাকে করে প্রচার চালান তিনি। সেখানে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতা-কর্মীরাও থাকছেন। তাঁর এবার স্লোগান, ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, এবার হবে কর্মসংস্থান’। প্রতিদিন কর্মসংস্থান নিয়েই তিনি বেশি বক্তব্য দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন

জাতীয় পার্টি গতকাল বিকেলে নগরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছে। দলটির নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে লিফলেট নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছেন। তাঁরা ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে পোস্টার লাগিয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরশিদ আলম গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন। পরে তিনি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নগরের লক্ষ্মীপুর মোড় থেকে গণসংযোগে বের হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলটির মহাসচিব ইউনুস আহমাদ।

জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার বিকেল চারটায় নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে দলটির সমর্থকেরা লিফলেট বিতরণ করেছেন। দলটি এই প্রথম নির্বাচন উপলক্ষে মিছিল বের করল। দলটি এখন পর্যন্ত ব্যানার, পোস্টার লাগায়নি।