আওয়ামী লীগের জন্য ট্রেন, বিএনপি বাসও পায় না

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে বিশেষ ট্রেন। নাটোর থেকে এই ট্রেনে রওনা হন দলটির নেতা-কর্মীরা। ২৯ জানুয়ারি সকালে নাটোরের মাধনগর স্টেশনে।
ছবি: মুক্তার হোসেন

ধরা যাক, বিএনপি আবারও ঢাকার বাইরে বিভাগীয় গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করল। সেই গণসমাবেশের একটি হবে রাজশাহীতে। আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা যাতে গণসমাবেশে যোগ দিতে পারেন, সে জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে নিয়ম মেনে পুরো একটি ট্রেন ভাড়া দিতে লিখিত আবেদন করল দলটি। এমনকি তারা ট্রেনের ভাড়াসহ অন্যান্য খরচের টাকাও আগাম পরিশোধ করার অঙ্গীকার করল।

এ রকম একটা পরিস্থিতি যদি দেশে সত্যিই তৈরি হয়, তাহলে কী কী ঘটতে পারে? অথবা কোন কোন প্রশ্ন তখন সামনে আসতে পারে? কারও পক্ষে কিছু অনুমান করা কি সম্ভব? অনুমানে যাওয়ার আগে দুটি প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার।

প্রথম প্রশ্ন—বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কি বিএনপির আবেদনে সাড়া দেবে?

দ্বিতীয় প্রশ্ন—রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্টের আশঙ্কায় বিএনপির আবেদনটি কি বিবেচনার অযোগ্য বলে খারিজ করে দেওয়া হবে?

যাঁরা প্রথম প্রশ্নের উত্তর মনে মনে ‘না’ ভেবে রেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরেও ‘না’ বলবেন না। (দুটি প্রশ্নের অন্তত একটি উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ হবে)

শুধু একটি ট্রেন নয়, গুনে গুনে আটটি ট্রেন রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য ভাড়া দেওয়ার নজির সৃষ্টি করেছে রেলওয়ে। এতে রেলওয়ের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি গণতন্ত্রের জন্য ‘কিছুটা’ হলেও তারা অবদান রাখতে পেরেছে।

এই লেখার শুরুর যে বর্ণনা, সেটি বাস্তবে এখনো ঘটেনি। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছেও ট্রেন ভাড়া চেয়ে বিএনপি কোনো আবেদন করেনি। অথচ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মনোভাব নিয়ে আগাম ‘ভুল’ ধারণা করে আছে অনেক মানুষ। শুধু একটি ট্রেন নয়, গুনে গুনে আটটি ট্রেন রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য ভাড়া দেওয়ার নজির সৃষ্টি করেছে রেলওয়ে। এতে রেলওয়ের আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি গণতন্ত্রের জন্য ‘কিছুটা’ হলেও তারা অবদান রাখতে পেরেছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় যেতে ভাড়া করা বিশেষ ট্রেন। ২৯ জানুয়ারি সকাল ৯ টার সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়।
ছবি:প্রথম আলো

২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভায় যাত্রী (নেতা-কর্মী) পরিবহনের জন্য রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল মোট আটটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া দিয়েছিল। এসব ট্রেনে করে সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা ও জয়পুরহাট জেলার নেতা-কর্মীরা রাজশাহী শহরে এসে দলের সমাবেশে যোগ দিতে পেরেছিলেন।

রেলওয়েকে ‘বুঝিয়ে’ বলতে পারলে, নিয়ম মেনে আবেদন এবং আগাম ভাড়া পরিশোধের নিশ্চয়তা পেলে বিএনপিও সমাবেশের জন্য পুরো ট্রেন ভাড়া (যদি প্রয়োজন হয়) করতে পারবে—এমন মতের সঙ্গেও হয়তো দ্বিমত করবেন অনেকে। এর কারণ হিসেবে তাঁরা হয়তো দুই মাস আগের ঘটনা টেনে আনবেন।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ ছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর। সেই গণসমাবেশের দুই দিন আগে রাজশাহীতে হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। তখন রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতি দাবি করেছিল, বিএনপির গণসমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোনো যোগসূত্র নেই। বিষয়টি ‘কাকতালীয়’। বিএনপির ওই সমাবেশের আগের দিন সারা দেশের সঙ্গে সড়কপথে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজশাহী। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধ্য হয়ে হেঁটে, রিকশায়—যে যেভাবে পারেন, গণসমাবেশে যোগ দেন। বিএনপির সমাবেশ শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে আকস্মিকভাবে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। মাঝখানে তিন দিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।

পুরোনো এই স্মৃতির কারণে অনেকে হয়তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে আওয়ামী লীগের মতো সমাবেশের জন্য বিএনপিও ট্রেন ভাড়া করতে পারবে। আবার কেউ কেউ হয়তো বলবেন, ঢাকার নয়াপল্টনে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করতে চেয়েও বিএনপি পারেনি। উল্টো পুলিশ ২৬ শর্ত দিয়ে নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলেছিল। রাজশাহীর সমাবেশে যেতে বিএনপি বাস ভাড়া করারও সুযোগ পায়নি। সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ট্রেনও ভাড়া করতে পেরেছে।

রাজশাহীতে গত ৩ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের দুই দিন আগে শুরু হয় পরিবহন ধর্মঘট। ২ ডিসেম্বর শহরের শিরোইল বাস টার্মিনালের চিত্র।
ফাইল ছবি

এ নিয়ে আক্ষেপ করে তৃণমূলের বিএনপির নেতা সাইদুর রহমান (সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক) প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘রাজশাহীর গণসমাবেশের (গত ৩ ডিসেম্বর) সময় পুলিশ দিয়ে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। বাস ধর্মঘট দেওয়া হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের হেনস্তা করা হয়েছে। এখন দেখছি আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে সরকারিভাবে ট্রেন, বাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এটা কোন ধরনের আচরণ?’


ইমাম হোসেন সাঈদ, ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং, প্রথম আলো

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন