কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে পদ দেওয়া হলো কতজনকে, তা নিয়ে নানা আলোচনা

ছাত্রলীগ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য পদ ছিল ৩০টির মতো। কিন্তু এর বিপরীতে বর্ধিত কমিটিতে পদ দেওয়া হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি নেতা–কর্মীকে। এর মধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে নামের জায়গা ফাঁকা রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়ার চিঠি। ছাত্রলীগের নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে অগঠনতান্ত্রিকভাবে পদায়ন করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ব্যক্তিকে। তবে ছাত্রলীগের দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, পদায়ন করা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত রোববার মধ্যরাত থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্ধিত কমিটিতে পদ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত পদ বিতরণ চলে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মানলে এভাবে পদ দেওয়া যায় না। এ কারণে ‘গণহারে’ পদ দেওয়া নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনায় মুখর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদেরও সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের হল কমিটিতে যেসব নেতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি, তাঁদের নাম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আগস্টের শোক ভুলে পদ পাওয়া নেতারা উচ্ছ্বাস-কৃতজ্ঞতা আর তাঁদের অনুসারী-সমর্থক-পরিচিতজনদের অভিনন্দন-শুভেচ্ছায় মগ্ন হয়েছেন ফেসবুকে। এতে শোকের আবহ ম্লান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির একাধিক নেতা।

ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আগস্টে সাধারণত সাংগঠনিক বিষয়ে সমালোচনা বা প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত থাকেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেই সুযোগে তড়িঘড়ি করে কোনো নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি বর্ধিত করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য৷ ‘গণহারে’ পদ দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। সাংগঠনিক চিঠি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় তা সংগ্রহ করে এডিটের (সম্পাদনা) মাধ্যমে অনেকে নিজেকে কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করে বসছেন।

নামের জায়গা ফাঁকা রেখে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়ার একটি চিঠির অনুলিপি ফেসবুকে শেয়ার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির পদ এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে কি না! নাম ও পদ বসিয়ে দিলেই হলো।’ তিনি আরও লেখেন, ‘বিএনপি-জামায়াত উল্লাস করে আগস্ট মাসে। আর আমাদের দুই নেতাও (আল নাহিয়ান ও লেখক) উল্লাসের উপলক্ষ সৃষ্টি করলেন এই মাসে।’

ছাত্রলীগের সহসভাপতি কামাল খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রক্তক্ষরণ হচ্ছে! শোকের মাস ও সংগঠনের স্বার্থেই দুদিন চুপ ছিলাম। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য সভা আহ্বানের প্রস্তাব করছি।’

আরেক সহসভাপতি সোহান খান লেখেন, ‘ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে অনুরোধ করব সংগঠনের স্বচ্ছতার স্বার্থে নামসহ নির্দিষ্ট তালিকা প্রকাশ করুন। কতজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদায়ন করেছেন? যদি তালিকা প্রকাশ না করেন, তাহলে অপকর্মকারীদের দায়ভার আপনাদেরই নিতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে এভাবে পদ দেওয়া নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারাও। তাঁদের একজন ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ পদ দেওয়া লীগ’।

মোট কতজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেছেন, অন্তত ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে যুক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই বর্ধিত কমিটিতে পদ পাওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এখনো কয়েকজনের চিঠি নেওয়া বাকি আছে। সবার নেওয়া শেষ হলে তালিকাটা প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠির মাধ্যমে এত পদ দেওয়ার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, ‘এটা সব সময় হয়ে এসেছে। অতীতেও এভাবে কমিটি বর্ধিত করা হয়েছে৷ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করা হয়ে থাকে।’

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।