সুষ্ঠু ভোটে ইভিএমের নয়টি চ্যালেঞ্জ

২০০৭ সাল থেকে দেড় দশকে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের পর নির্বাচন কমিশন ইভিএমে ৬ থেকে ৭৫টি আসনে ভোটের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সেখানে মাত্র এক বছরে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোটের ‘সব সঠিকতা’ কতটা নিশ্চিত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছেন এক নারী। ঢাকার ধামরাইয়ের সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে
ফাইল ছবি

গত ৩০ মে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘গোপন কক্ষে একজন করে “ডাকাত” দাঁড়িয়ে থাকে, এটাই ইভিএমের চ্যালেঞ্জ।’ (প্রথম আলো, ৩০ মে ২০২২) এমতাবস্থায় ভোটার শনাক্তকরণের পর যেখানে ডাকাতেরা ‘বাটন’টি টিপে দেন, সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারিগরি উৎকর্ষের ইভিএমও স্বচ্ছ নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না।

বাংলাদেশের ভোটারদের অবিশ্বাস জেগেছে যে মূলত ক্ষমতাসীন দলই নির্বাচন পরিচালনা করে, নির্বাচন কমিশন তাদের আজ্ঞাবহ! ইভিএমের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন এবং ভোটব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা আছে কি না, সেটা।

বিষয়টি শুধুই কারিগরি নয়, বরং রাজনৈতিকও। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতাচর্চার বিষয়গুলো এক পাশে সরিয়ে রেখে এখানে কারিগরি দিক থেকে ইভিএমের ৯টি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে হলো।

আরও পড়ুন

১. নিখুঁত এনআইডি/বায়োমেট্রিক তথ্যশালাই এখনো তৈরি হয়নি

সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে আঙুলের ছাপ এবং জন্মনিবন্ধনের তথ্যশালা পুরোপুরি নিখুঁত হয়নি। নির্বাচন কমিশনে এনআইডি বিষয়ে লাখ লাখ অভিযোগ রয়েছে। এনআইডিতে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল একটি সংলাপে বলেছেন, ‘ভুলের পরিমাণ এত বেশি যে আমার মনে হয় কোটি কোটি ভুল।

ইভিএম মেশিন
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

এটা নিয়ে বিপদে পড়ছি। নামের বানানে এটা-ওটা মিলছে না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুবান্ধবের ৪০-৫০টি সংশোধন করে দিয়েছি।’ (আমাদের সময়, ১৯ জুলাই ২০২২) যেখানে নিখুঁত এনআইডি ও বায়োমেট্রিক তথ্যশালাই তৈরি হয়নি, সেখানে অর্ধেক (১৫০) আসনে ইভিএমে ভোটের যৌক্তিকতা কোথায়?

২. আঙুলের ছাপ অনেক সময় মেলে না

কায়িক পরিশ্রম, গৃহস্থালির কাজ, অপরাপর শ্রমঘন কাজের সঙ্গে যুক্ত নাগরিক এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপ ইভিএমে না মেলার বহু অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ ইভিএমে প্রায়ই কৃষক, শ্রমিক ও বয়স্ক ব্যক্তিদের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ (আঙুলের ছাপ) সম্ভব হয় না। তখন আঙুলে ছাপ মেলানোর উপর্যুপরি চেষ্টা চলে। এতে ভোটকেন্দ্রের বুথে দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়, ভোটদানের গতি কমে যায়।

আরও পড়ুন

৩. কেন্দ্রের মাস্টার ডেটাবেজ অনুপস্থিত

একটি কেন্দ্রের ভোটারদের ভোটার ক্রমিক নম্বরের ভিত্তিতে একাধিক পোলিং বুথে ভাগ করা হয়, এ রকম প্রতিটি পোলিং বুথে একটি ইভিএম থাকে। নির্দিষ্ট ‘পোলিং কার্ড’ দিয়ে শুধু ওই নির্দিষ্ট ভোটারদের তথ্য একটি ইভিএমে স্থানান্তর করা হয় কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে। কিন্তু ওই ইভিএম হ্যাং করলে, নষ্ট হলে কিংবা ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে তখন ভোটদানের ব্যবস্থা করা যায় না। ডিজিটাল হলেও ইভিএমের আর্কিটেকচার সত্যিকার অর্থে কতটা ভোটারবান্ধব, সেই প্রশ্ন তাই থেকেই যায়।

৪. ইভিএমকে ওভাররাইট করার ক্ষমতা

অনেকের আঙুলের ছাপ মেলে না বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইভিএমকে ওভাররাইট (যদি কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলে, তখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ব্যালট চালু করে দেওয়ার পদ্ধতি) করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্সহীন’ অনধিকারচর্চার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ আছে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত জাতীয় নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ইভিএমকে ওভাররাইট করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ, ফেনী কিংবা বগুড়ার অল্প কিছু নির্বাচনী এলাকা ছাড়া অধিকাংশ সংসদীয় আসনই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ১৯৯১ ও ১৯৯৬-এর নির্বাচনী ফলাফলের ভোটের বিন্যাসে দেখা যায়, ৫০ শতাংশের বেশি আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মোট ভোটের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে। অন্য কোনো জালিয়াতি না থাকলেও শুধু কর্মকর্তাদের ইভিএম ওভাররাইটই ফলাফল পরিবর্তনের প্রধানতম হাতিয়ার হতে পারে!

৫. ইন্টারনেট সংযুক্ত না থাকলেও ইভিএমকে দূরনিয়ন্ত্রণ সম্ভব কি

ইভিএম ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তাই যন্ত্রটিকে ভার্চ্যুয়ালি জালিয়ারি করা অসম্ভব, এই ধারণাও ভুল হতে পারে। ইভিএম ইন্টারনেটে সংযুক্ত নয়, তবে ‘বিশেষ প্রভাবশালী’ গোষ্ঠী চাইলে ভোটের ফলাফল করা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ইভিএমে ভোটদান সম্পন্ন হলে বুথের ফলাফল হস্তান্তরের জন্য একটি বিশেষ কার্ড ব্যবহার করা হয়। এই কার্ড ‘অডিট কার্ড’ নামে পরিচিত। এই কার্ডগুলোর সঠিকতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অডিট কার্ড কত সেট থাকবে, গোপনীয় বা ডুপ্লিকেট কার্ড আছে কি না, তা জানার নিশ্চয়তা নেই। আগে থেকে সাজানো ফলাফলের প্রি-রেকর্ডেড অডিট কার্ড ব্যবহার করলে যেকোনো ধরনের জালিয়াতি প্রমাণ করা অসম্ভব।

ইভিএমের অপারেটিং সফটওয়্যার সিস্টেম ‘ওপেন সোর্স’ নয়। ফলে ভোটের দিন ঠিক কোন অ্যালগরিদমে ইভিএম চলবে, সেটা নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ টিম’-এর বাইরে কেউ জানবে না। কমিশনারদের অজান্তেই আইটি বিভাগ ‘বিশেষ ক্ষমতাসীন’দের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে অ্যালগরিদমে পরিবর্তন আনবে না, এই নিশ্চয়তা আছে কি?

অডিট কার্ডের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রের একেকটি বুথ ইভিএম থেকে ফলাফল হস্তান্তরের পর ওই কেন্দ্রের মিলিত ফলাফল এবং পুরো আসনের সব কেন্দ্রের সম্মিলিত ফলাফল—দুটিই ম্যানুয়াল পদ্ধতির। পুরো ইভিএম ভোটপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলেও শুধু ফলাফল তৈরির ম্যানুয়াল বলে ডুপ্লিকেট অডিট কার্ড বা আগে থেকেই রেকর্ডেড ‘অডিট কার্ডের’ মাধ্যমে সহজেই জালিয়াতি সম্ভব। ভোট শুরুর ঠিক আগে ও ভোট বন্ধের ঠিক পরে এমন লাখ লাখ অডিট কার্ডের ডিজিটাল ফরেনসিক টেস্ট সম্ভব নয়, এই কারিগরি সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের যেমন নেই, তেমনি নেই বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলেরও।

৬. ইভিএমে ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল নেই

ইভিএমের একটি বড় দুর্বলতা হলো, ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলের (ভিভিপিএটি) ব্যাকআপ নেই। যেটা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেখানকার ইভিএমে সংযুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি/ভোটার কাকে ভোট দিলেন, সেটা নিশ্চিত হতে পারেন।

ফলে ভোটের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ভোট পুনর্গণনা করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ইভিএমে ভিভিপিএটি না থাকায় নির্বাচন কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে, তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এটি পুনর্গণনা বা অডিট করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশন কর্তৃক গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে সই করেননি।

৭. ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের ব্যবস্থা নিরাপদ নয়

ইভিএমে ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের ব্যবস্থা আছে, ডিজিটাল অডিট ট্রেইলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। সোর্স কোড উন্মুক্ত নয়। নির্বাচনের ঠিক আগে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে প্রতিটি ইভিএম মাদারবোর্ড পরীক্ষা করা, পরীক্ষা শেষে প্রতিটি সফটওয়্যারের ডিজিটাল ছাপ (ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট) সংরক্ষণ করা দুরূহ কাজ, বলতে গেলে অসম্ভব।

সব কটি যন্ত্রের (প্রায় ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র এবং লক্ষাধিক ইভিএম) হার্ডওয়্যারের লিস্ট, সার্কিট ডিজাইন, হার্ডডিস্ক ও কার্ডের ফরেনসিক কপি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, পক্ষ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে না এবং তাঁদের সেসব যাচাইয়ের কারিগরি সক্ষমতাও নেই (দ্য ডেইলি স্টার, ২৮ মে ২০২২)।

পেপার ব্যাকের বদলে ডিজিটাল অডিট ট্রেইলের সমস্যা হচ্ছে, ভোটের রেকর্ড ভবিষ্যতে বের করা ঝুঁকি থাকে। ভোটারের গোপনীয়তার জন্য শুধু পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশাই যথেষ্ট নয়। যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন (জিডিপিআর) রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটি নেই।

তাই ইভিএমে ডিজিটাল অডিট ট্রেইল ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২৪ জুলাই পাটুয়াটুলীতে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, ‘ভোট হবে ইভিএমে, কে কোথায় ভোট দেবে, তা কিন্তু আমাদের কাছে চলে আসবে।’ এ রকম বক্তব্য আমরা চট্টগ্রামেও শুনেছি; অর্থাৎ যেকোনো ডিজিটালব্যবস্থা বৈশিষ্ট্যগতভাবেই বাধ্যতামূলক লগ ও রেকর্ড তৈরি করে বলে কাগজের ব্যালটের মৌলিকত্ব ও গোপনীয়তা ইভিএম দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না।

অস্ট্রেলিয়ান পাবলিক সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ তথ্য প্রযুক্তিবিদ সাইফুর রহমানের মতে, সিস্টেমকে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম মনিটরিং সফটওয়্যার গুরুত্বপূর্ণ। ভোট চলা অবস্থায় কেন্দ্রের কেউ যদি ইভিএমের সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করেন বা অসদুদ্দেশ্যে কোনো প্রোগ্রামিং স্ক্রিপ্ট প্রবেশ করান, তাহলে তা সংকেত এবং এসএমএস দিয়ে সব পক্ষকে জানিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোট বন্ধ করার ব্যবস্থা বাংলাদেশের ইভিএমে নেই।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল আলীমের অভিমত, ইভিএমের নিরাপত্তার ওপর আস্থা ফেরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কারিগরি পরীক্ষা, সফটওয়্যার অডিট, বায়োমেট্রিক সিস্টেমের অডিট, ভোটিং মেশিন উৎপাদনের প্রক্রিয়া অডিট, ট্যাবিউলেশন সফটওয়্যার অডিটসহ বিভিন্ন পাবলিক সিকিউরিটি পরীক্ষার আয়োজন করা দরকার।

প্রোগ্রামিং সোর্স কোডটিও খুলতে হবে, যাতে যে কেউ অ্যাকসেস পেতে পারেন; অর্থাৎ মেশিন অ্যালগরিদমকে ওপেন সোর্স করতে হবে। ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপিএটি প্রবর্তন করতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে ভোট সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে, ভোটাররা তা নিজেরাই যাচাই করতে পারবেন এবং অবশেষে নির্দিষ্ট একটা শতাংশ হারে প্রদত্ত ভোটের ওপর বাধ্যতামূলক ভিভিপিএটি স্লিপভিত্তিক অডিট চালু করা দরকার (দ্য ডেইলি স্টার, ২৬ জুন ২০২২)।

৮. ইভিএম হ্যাং করে

মাঠপর্যায়ের প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্যমতে, ইভিএমের একটা বড় ত্রুটি হচ্ছে মেশিন হ্যাং হওয়া। ডিজিটাল ব্যালট পেপারে ভোট পরিবর্তন করতে, ভুল সংশোধন করতে, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক ব্যালটে ভুলে চাপ দিলে ইভিএম হ্যাং হয়ে যায়। একবার হ্যাং করলেই ৫-১০ মিনিট নষ্ট হয়, যন্ত্র আবার চালু করতে হয়। এতে ভোট গ্রহণের গতি কমে যায়।

৯. ভোটদান ডিজিটাল কিন্তু ফলাফল তৈরি ম্যানুয়ালি

ভোটের সময় শেষ হলে ‘ভোট প্রদানের তথ্য’ অডিট কার্ডে এনে পরে ভোটের ফলাফল হাতে তৈরি করা হয়। সব বুথ থেকে ফলাফল ম্যানুয়ালি নিয়ে তা কেন্দ্রের ও আসনের ফলাফল তৈরির পদ্ধতি একদিকে হাস্যকর এবং অন্যদিকে জালিয়াতিপ্রবণ। ডিজিটাল যন্ত্র হলেও সব কেন্দ্রের সমন্বিত ফলাফল তৈরি করতে বর্তমান ইভিএম সক্ষম নয়। ডিজিটাল ভোটের নামে চালানো হলেও ইভিএমের ফলাফল তৈরি স্বয়ংক্রিয় নয়। অর্থাৎ ভোটদানের প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলে ফলাফল তৈরি হচ্ছে ম্যানুয়ালি।

১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচনের সক্ষমতা আসলে নির্বাচন কমিশনেরই নেই। ২০০৭ সাল থেকে দেড় দশকে অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের পর কমিশন ৬ থেকে ৭৫টি আসনে ইভিএমে ভোটের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সেখানে মাত্র এক বছরেই এই সক্ষমতা ‘সব সঠিকতা’ নিশ্চিত করে দ্বিগুণ করা কতটা সম্ভব?

এখানে শুধু ইভিএম কেনার বিষয় নয়, বরং নষ্ট মেশিন প্রতিস্থাপন, কারিগরি ত্রুটি শোধরানো, দক্ষ টেকনিশিয়ান তৈরি, ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবহন, মজুতকরণ, নিরাপত্তাবিধান, কমিশন ও কমিশনের বাইরের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মতো বিশদ কর্মযজ্ঞের বিষয় রয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) হিসাবে, সক্ষমতা দ্বিগুণ করতে চাইলে অন্তত আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। বর্তমান ডলার-সংকটে নতুন করে এত বিপুল ব্যয়ের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতাই বা কোথায়?

[গত ২৮ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের উপযোগিতা’ শীর্ষক সুজনের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রবন্ধ অনুসারে]

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রযুক্তিবিদ। টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ[email protected]