দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আনিসুল ইসলাম ও মুজিবুল হক

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু
ফাইল ছবি

জুলাই গণ–অভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো ভুল করে থাকলে তার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরবিরোধী অংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। একই কারণে কাউন্সিলে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান দলের সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও।

তবে জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরপন্থী অংশ এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি। তারা এই সম্মেলনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে ‘বেআইনি’ এবং ‘গঠনতন্ত্রবিরোধী’ বলে মনে করে।

কাউন্সিলে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘তখনকার যে নিয়ম ছিল, যে আইন ছিল, (সে অনুযায়ী) বিশ্বের স্বীকৃত একটা সরকার নির্বাচন করে। সেই সরকারকে প্রতিহত করতে হলে আপনাকে পার্লামেন্টে (সংসদে) যেতে হবে। আমরা তো বিপ্লবী পার্টি নই। তারপরও যদি জনগণ মনে করে, আমরা কোনো অন্যায় করেছি, নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। কারণ, আমরা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই, জনগণের মতামতকে সম্মান প্রদর্শন করতে চাই। জনগণকে নিয়েই চলতে চাই।’

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে আনিসুল ইসলাম বলেন, সে সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিএনপির এক উচ্চপদস্থ নেতার সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির কারণে সেটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করেছি। আপনারা নির্বাচন করেননি। কিন্তু আপনারা তো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো করেছেন। আপনারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছেন, আমরা করেছি। আপনাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়?’

৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু এক বছর পর বুকে হাত দিয়ে বলেন, পরিবর্তন কি ভালোর দিকে গেছে? দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৩ শতাংশে নেমেছে। প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশ ছিল। আপনারা বলছেন, চুরি বন্ধ করেছেন, বিদেশে টাকা যাওয়া বন্ধ করেছেন। তাহলে প্রবৃদ্ধি কমল কেন?
—আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান

বর্তমান সরকারের সময় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু এক বছর পর বুকে হাত দিয়ে বলেন, পরিবর্তন কি ভালোর দিকে গেছে? দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৩ শতাংশে নেমেছে। প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশ ছিল। আপনারা বলছেন, চুরি বন্ধ করেছেন, বিদেশে টাকা যাওয়া বন্ধ করেছেন। তাহলে প্রবৃদ্ধি কমল কেন?’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে জি এম কাদেরবিরোধী অংশ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। এতে আনিসুল ইসলামকে চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্বাহী চেয়ারম্যান করা হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়। কাউন্সিলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জাতীয় পার্টির কয়েক হাজার নেতা–কর্মী অংশ নেন।

আরও পড়ুন

নবনির্বাচিত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছিলাম, জাতীয় পার্টি থেমে যাচ্ছে। পার্টি টুকরা টুকরা হচ্ছে এবং যাঁরা মূল দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বলতে চাই, জাতীয় পার্টি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, বরং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আজকের এই কাউন্সিল অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে।’

‘বর্তমান সরকারকে তারাই উপদেশ দিচ্ছে, যারা এই দেশে বসবাস করেনি’ বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে নতুন কমিটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজকের কাউন্সিল অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পার্টিকে মানুষ স্বৈরাচার বলে। এর একমাত্র কারণ ২০(ক) ধারা। এটা অসাংবিধানিক ধারা। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে এই ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘সরকারটা চলছে না। চলবে কীভাবে? গভর্নমেন্ট তো নেই। আর উপদেশ দিচ্ছে কারা, যারা কেউ এ দেশে বসবাস করেনি। কবে কোন অমাবস্যার রাতে দেশ ছেড়ে চলে যাবে, কেউ জানবেও না। এই বাস্তবতা চিন্তা করার পরে মনে হয়, হায় হায়, এ দেশটা আমাদের! আমরা এ দেশের অনন্য অংশীদার ছিলাম। কথা বলার সময় মুখ সামলে কথা বলবেন।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব অনিবার্য উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘একটা প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা চলে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, একটা শেষ খেলা হবে। দ্বন্দ্ব এখন অনিবার্য। আমরা সবাই নাকি স্বৈরাচার হয়ে গেছি। আপনারা গণতন্ত্র শিখেছেন কোথা থেকে? তারা যে ভাষায় কথা বলে, আমরাও সেই ভাষায় কথা বলতে জানি। তাই যাঁরা রাজনীতি করবেন এবং করছেন, তাঁদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।’

জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশের সম্মেলন
ছবি: প্রথম আলো

নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে নতুন কমিটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজকের কাউন্সিল অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পার্টিকে মানুষ স্বৈরাচার বলে। এর একমাত্র কারণ ২০(ক) ধারা। এটা অসাংবিধানিক ধারা। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে এই ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

জাতীয় কাউন্সিলে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন জাতীয় পার্টির সদ্য বিদায়ী কমিটির মহাসচিব মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে আমরা অনেকগুলো নির্বাচন করেছি, অনেকে আমাদের বিভিন্নভাবে কটূক্তি করেন, বিভিন্নভাবে স্বৈরাচারের সহযোগী হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। একটি কথাই বলব, আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো অন্যায় করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল করে থাকি, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।’

আরও পড়ুন

জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকের কাউন্সিলের নেতারা জাতীয় পার্টির হারানো গৌরবকে পুনরুদ্ধার করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

কাউন্সিলে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, জাতীয় পার্টির (মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য দিদারুল আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, সাইদুর রহমান, জাতীয় তরুণ সংঘের চেয়ারম্যান ফজলুল হক প্রমুখ।