বাংলাদেশ সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে গণ্য হতে পারে: জি এম কাদের

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জি এম কাদেরছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের নেতা জি এম কাদের বলেছেন, সুখের অভাব হয় দেশের মানুষের যখন সুশাসনের অভাব হয়। যেভাবে সুশাসনের অধঃপতন হচ্ছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

আজ সোমবার বিকেলে মতিঝিলের এজিবি কলোনি কমিউনিটি সেন্টারে জাপার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আয়োজিত এক ইফতার অনুষ্ঠানে জি এম কাদের এ কথা বলেন। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-২০২৪’-এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪৩টি দেশের মধ্যে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। অথচ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম এবং ২০২২ সালে ছিল ৯৪তম।

সুখী দেশের তালিকা করার ক্ষেত্রে মানুষের সুখের নিজস্ব মূল্যায়ন, সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে শূন্য থেকে ১০ সূচকে নম্বর পরিমাপ করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি দেশের মানুষের ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, উদারতা, জিডিপি ও দুর্নীতির মাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই জরিপে আফগানিস্তান ১৪৩তম হয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন

এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘আশঙ্কা আছে, যেভাবে অধঃপতন হচ্ছে, এ রকম চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা সবচেয়ে অসুখী দেশ হিসেবে গণ্য হতে পারি। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। কোথাও সুশাসন নেই। সরকারকে জবাবদিহি করার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। স্বজনপ্রীতি আর দলীয়করণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণেই দেশের মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, তাই অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েই চলেছে।’

জি এম কাদের আরও বলেন, ২০২৩ সালে সড়কে মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৬২৪ জনের। দেশের মানুষের জীবনের যেন কোনো দাম নেই। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। প্রতিবছর শত শত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে ভয়াবহ আগুনে।

দুর্নীতির বিস্তার অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতা বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতির হার বেশি। দুর্নীতির বিস্তার লাভ করছে প্রতিদিন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

জি এম কাদের বলেন, একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের অস্বাভাবিক দাম, অন্যদিকে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। মানুষ এর থেকে মুক্তি চায়। তিনি বলেন, ‘আমরা সে উন্নয়ন চাই না, যার কারণে অসুখের উন্নতি হয়। আমরা সেই উন্নয়ন চাই, যাতে সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ হয়।’

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক জহিরুল আলমের সভাপতিত্বে ইফতার অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, শেরিফা কাদের, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, মনির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, সুলতান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ, মো. সামছুল হক, বেলাল হোসেন, আবদুল হামিদ ভাসানী প্রমুখ।