হেফাজতে ইসলাম কি ‘মুচলেকা’ দিয়েছে

হেফাজতে ইসলামকে যে নতুন করে হঠাৎ ‘অরাজনৈতিক’ হওয়ার ঘোষণা দিতে হচ্ছে, সেটা কেন ঘটছে, তা জানা দেশের নাগরিকদের দিক থেকেও জরুরি হতে পারে।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ
ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলামের মুচলেকার খবর বেরিয়েছে কিছু পত্রিকায়। দাবি করা হয়েছে, এ সংগঠন আর রাজনীতি করবে না। বিনিময়ে নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো যেন তুলে নেওয়া হয়; যাঁরা আটক আছেন, তাঁরা যেন ছাড়া পান।

‘মুচলেকা’ শব্দটি হিসেবে ইংরেজি ‘বন্ড’-এর মতো। শব্দটা অপরাধবিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত। এর অর্থ কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে এ রকম অঙ্গীকার আদায়, যেন সে বা তারা ভবিষ্যতে আর বিশেষ ধরনের অন্যায় না করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি প্রমাণিত হয় ওই ধরনের অপরাধ করেছে, তাহলে সে নির্ধারিত দণ্ড ভোগ করবে।

ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১০৬, ১০৭, ১০৮ ও ১০৯-এ বন্ড বিষয়ে আলোচনা আছে। মুচলেকার পরোক্ষ মানে এ-ও দাঁড়ায়, ‘অপরাধ’ মেনে নেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, হেফাজতে ইসলামের নেতারা কি সত্যি মুচলেকা দিয়েছেন? কেন এ রকম বিতর্ক উঠল? এর রাজনৈতিক ফলাফল কী? বিষয়টি নিয়ে লেখক হেফাজতের নেতাদেরও আনুষ্ঠানিক মতামত নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

যেভাবে মুচলেকা প্রসঙ্গ এল

২৫ জানুয়ারি দেশ রূপান্তর পত্রিকায় হেফাজত সম্পর্কে দীর্ঘ প্রতিবেদন বের হয়। প্রতিবেদনের প্রথম লাইনগুলো ছিল এ রকম: আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তাঁরা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কে জড়াবে না হেফাজত।

দেশ রূপান্তর-এর আগে প্রথম আলোতে একই বিষয়ে খবর বেরিয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর। সেখানে মুচলেকা শব্দ ছিল না। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেফাজতের নেতারা সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে হেফাজতের চারজন নেতা কথা বলেন। সিনিয়র নায়েবে আমির মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং কারাবন্দী আলেমদের মুক্তি চান। ইতিমধ্যে হেফাজতের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, সে জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মুক্তি পাওয়াদের আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তাঁরা।

একই বৈঠকে মহাসচিব সাজিদুর রহমান জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামবিদ্বেষী লেখা বাদ দেওয়া, ধর্মশিক্ষা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে আলেমদের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান। এই বৈঠকের দিন (১৭ ডিসেম্বর) কালবেলার খবর ছিল: ২৬ শর্ত মেনে হেফাজতে ইসলাম ঢাকায় সম্মেলন করেছে। শর্ত মেনে সমাবেশ বা সম্মেলন দেশে এখন নতুন নয়। তবে রাজনীতি না করার মুচলেকা নতুন। প্রশ্ন হলো, হেফাজতের মুচলেকার খবরের উৎস কী।

আরও পড়ুন

হেফাজত সাংগঠনিকভাবে যা বলেছে

হেফাজতে ইসলামের নেতা মীর ইদ্রিস ২৭ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাঁরা কোনো মুচলেকা দেননি। মীর ইদ্রিস প্রয়াত হেফাজত নেতা জুনায়েদ বাবুনগরীর ভগ্নিপতি। জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা হলেন এখনকার আমির শাহ মুহিবুল্লাহ। সাংগঠনিক অবস্থান এবং বর্তমান ও পুরোনো নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে মীর ইদ্রিসের দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া যায়। হেফাজতে ইসলামী যে সরকারকে আড়াই পাতার একটা স্মারকলিপি দিয়েছে, সেটাও সত্য। দশ অনুচ্ছেদ এবং ৬৬ লাইনের সেই স্মারকলিপিতে এই সংগঠন নিজেকে ‘অরাজনৈতিক’ দাবি করে। প্রায় এক দশক বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় এক আলোচ্য বিষয় হয়ে থাকার পরও হেফাজত যখন নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করে, তখন বিষয়টি কিছুটা বিতর্ক তোলে বৈকি। এ-ও বিস্ময়কর, হেফাজতকে হঠাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে এটা বলতে হচ্ছে কেন? তবে হেফাজত আগেও বলেছে, তারা ঠিক রাজনৈতিক দল নয়।

হেফাজতের নেতারা এবার সাত দফা দাবির কথা জানানোর সময় যে স্মারকলিপি দেন, তার প্রথম অনুচ্ছেদে বলেছেন: হেফাজতে ইসলামের কোনো রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা নেই…আজ পর্যন্ত হেফাজত কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। …হেফাজতের সঙ্গে দেশ বা দেশের বাইরের কোনো রাজনৈতিক দলের কোনোরকম সম্পর্ক নেই। এমন বক্তব্যই চলতি বিতর্ক তৈরি করেছে।

দেখা যাচ্ছে, সংগঠনের নেতারা ‘ভবিষ্যতে’ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শরিক না হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই স্মারকলিপিতে হেফাজত আহমদিয়া বা কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলমান ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। তাবলিগ জামাতের সাদ কান্ধলভির বাংলাদেশে আসা বন্ধেরও দাবি জানানো হয়েছে। লক্ষণীয়, হেফাজত একদিকে নিজেদের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ লাঘবের দাবি জানানোর পাশাপাশি অন্য অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে সক্রিয় হতে বলছে।

মুচলেকা বিতর্কে লাভক্ষতির হিসাব

হেফাজতের সর্বশেষ সাংগঠনিক ঘোষণা সরকার তথা শাসক দলের জন্য লাভজনক হয়েছে। যেকোনো দেশে যেকোনো শাসক দল তার প্রতিপক্ষ শক্তির সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায়। এ রকম চাওয়া স্বাভাবিক। হেফাজতের মতো বিশাল একটি সংগঠন যদি শাসক দলকে কথা দেয় যে তারা রাজনীতি করবে না, তাহলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তির হওয়ার কথা। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার বা তার প্রচারণা বাস্তবসম্মত কি না? তবে এর ফলে হেফাজতের নেতৃত্বে নিশ্চিতভাবে রাজনৈতিক দলবহির্ভূত আলেমদের অবস্থান শক্তিশালী করে তুলবে।

মুচলেকা না হলেও হেফাজতের নতুন অবস্থান দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরেও বেশ আলোড়ন তুলেছে। তাদের জন্য এ সময় এ রকম সংবাদ সুখকর হয়নি। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাপারটি ভিন্ন রকমও হতে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার সময় হেফাজতের ১০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির এবং মহাসচিবও। ওনারা দলের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন। তবে এই ১০ জন যে সংগঠনের শক্তি-ভিত দেশের সব মাদ্রাসার প্রতিনিধিত্ব করেন, এমন নয়। হেফাজতের সাংগঠনিক পরিসর শত শত মাদ্রাসায় বিস্তৃত। কওমি প্রাক্তনদের কাছেও তার আবেদন আছে। সুতরাং এখনকার ১০ নেতার নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত মতো হেফাজতের সব কর্মী যেমন বিরোধীদলীয় রাজনীতির সমর্থক হবেন না, তেমনি সরকার-সমর্থকও হবেন না কিংবা রাজনীতিবর্জিত ব্যক্তি হয়ে যাবেন না।

হেফাজত কোনো এক ব্যক্তি বা গুটিকয়েক ব্যক্তির প্রভাবে নেই এ সময়। শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এই সংগঠনে একক নেতৃত্বের জায়গা বদলে গেছে। মাওলানা শফীর মৃত্যু নিয়ে হেফাজতেরই একাংশ অপর ৩৬ নেতার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে হত্যা মামলা দিয়েছিল। নেতৃত্ব কাঠামোর সেসব ফাটল পুরোটা ভরাট হয়েছে এমন বলা বিতর্কসাপেক্ষ।

এ রকম বাস্তবতায় হেফাজতের সর্বশেষ অবস্থানে তাৎক্ষণিকভাবে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামী ধারার অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। যেসব হেফাজত সংগঠক চলতি নিয়ন্ত্রণমূলক অবস্থা পছন্দ করবেন না, তাঁরা উপরিউক্ত দুই দলসহ পছন্দমতো অন্যান্য দলের প্রতি বেশি আগ্রহী হতে পারেন।

তবে হেফাজতকে যে নতুন করে হঠাৎ ‘অরাজনৈতিক’ হওয়ার ঘোষণা দিতে হচ্ছে, সেটা কেন ঘটছে, তা জানা দেশের নাগরিকদের দিক থেকেও জরুরি হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। এই সংবিধান সমাবেশ ও সংঘ গঠনের অধিকার দেয় ব্যক্তিকে। চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতারও নিশ্চয়তা দেয়।

সংবিধানের ৩২-৩৭-৩৮-৩৯ অনুচ্ছেদে শর্ত সাপেক্ষে হলেও এসব অধিকার দিয়েছে। সুতরাং হেফাজতের মুচলেকার সংবাদের সত্য-মিথ্যা যাচাই যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এতে আনন্দিতদের এ-ও জানানো দরকার, যেকোনো খারাপ রাজনৈতিক নজির ঐতিহাসিকভাবে সংক্রামক রোগের বীজের মতো।

‘অরাজনৈতিক’ হলেও হেফাজতে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন যেভাবে

হেফাজতে ইসলামের জন্ম ২০১০ সালে, এটা অনেকের জানা। সে সময় ‘১৩ দফা’ দিয়েছিল তারা। ২০২৩ সালে দিচ্ছে ‘সাত দফা’। এবারের সাত দফার স্মারকলিপিতে পুরোনো ১৩ দফার উল্লেখ নেই। এখনকার সাত দফার প্রথম দুই দফা নেতা-কর্মীদের মুক্তিবিষয়ক। কাকতালভাবে দাবি ‍উত্থাপনের দ্বিতীয় দিনই দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী কারামুক্ত হয়েছেন। এই দেখে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা খুশি। এটার সঙ্গে ‘রাজনীতি না করা’র প্রতিশ্রুতির কোনো সম্পর্ক আছে কি না, বলা মুশকিল।

গত বছর মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় হেফাজতের প্রতিবাদ জানানোর কয়েক দিন পর ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে আটক হয়েছিলেন আজিজুল হক। তারপর তাঁর বিরুদ্ধে ১৩টি মামলার খবর দেখা যায়। এখন অবশ্য সব কটিতে তাঁর জামিন হলো। আজিজুল হকের মুক্তির পর অন্যদের জামিন ও মুক্তির বিষয়ে আশাবাদ তৈরি হয়েছে এই সংগঠনে। প্রথম আলোর ২৭ জানুয়ারির খবরে বলা হয়েছে, হেফাজতের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ২৮৫টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা থেকে সংগঠন যে ‘সকল উপায়ে’ মুক্তি চাইবে, সেটা স্বাভাবিক।

৪৬ বছর বয়সী আজিজুল হক ইসলামাবাদী নেজামে ইসলাম দলের যুগ্ম মহাসচিব। এককালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র সমাজের সভাপতি ছিলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, আজিজুল হক কি এখন রাজনীতি ছেড়ে দেবেন? তিনি যেভাবে একই সঙ্গে নেজামে ইসলামী দল এবং হেফাজতের নেতা ছিলেন, সেভাবে আরও বহু হেফাজত নেতা অনেক ইসলামী দলের সঙ্গে যুক্ত। এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। হেফাজতের বক্তব্য হলো, এ রকম ‘রাজনীতিবিদ’রা নিজ দলে ‘রাজনীতি’ করবেন, কিন্তু হেফাজত হবে ‘অরাজনৈতিক’।

হেফাজতের সাংগঠনিক এই চরিত্রটা কিছুটা অভিনব। এখানে আছে ইসলামী ঐক্যজোটের একাধিক অংশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফতে মজলিসের একাধিক অংশসহ আরও ইসলামি রাজনৈতিক দল। স্বাভাবিক সব রাজনৈতিক কাজই করেন তাঁরা। গত বছর আটক হওয়া হেফাজত নেতা মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির একসময় হাটহাজারী উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন এবং জিতেছেনও।

২০১৮ সালের নভেম্বরে তখনকার ২০-দলীয় জোটে হেফাজতভুক্ত জমিয়তের দুটি অংশ সম্ভাব্য নির্বাচনে বিএনপির কাছে ৫টি করে যে আসন চেয়েছিল, তার খবর অনেক গণমাধ্যমে আসে তখন। প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব হওয়ার সময় জমিয়তে উলামায়ের মহাসচিব ছিলেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে ছিল এই দল। হেফাজতের আরেক নেতা, আল্লামা শফীর নিকটাত্মীয় মাইনুদ্দিন রুহি ২০২১ সালের ১ মে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, তাঁরা দেশে ইসলামি সমাজব্যবস্থা চাইছেন।

সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন কিংবা হেফাজতের পুরোনো ১৩ দফায় যেভাবে শিক্ষানীতি, নারী নীতি বাতিলের দাবি রয়েছে, যেভাবে পরোক্ষে ধর্ম অবমাননার জন্য আইন চাওয়া হয়েছে—এগুলো ‘অরাজনৈতিক’ দাবি বলা কতটা সম্ভব, সেটা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলতে পারবেন। হেফাজতের ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ হওয়ার দাবিটার ভেতর ভবিষ্যৎ বিতর্কের যে একটা জায়গা আছে, সেটা স্পষ্ট। বিতর্কের সেই সম্ভাবনা অন্য কারণেও বাড়ল।

হেফাজত যে দুজনের নামে সর্বশেষ স্মারকলিপি দেয়, তার একজন আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন না, যা তাৎপর্যবহ। তবে একই বিষয়ে বর্তমান লেখককে দেওয়া মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে হেফাজত নেতাদের নির্বাচনী-রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

তিনি বলেছেন, ‘হেফাজত নির্বাচনে অংশ নেয়নি বা নেবে না। তবে এর সদস্যরা কোনো দল থেকে বা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। অতীতে সেভাবে অনেকে ভোট করেছে। এ বিষয়ে সংগঠন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। তবে নির্বাচনে যাওয়া বা না-যাওয়ায় হেফাজতের নাম ব্যবহারের সুযোগ নেই।’ তিনি এ-ও যুক্ত করেন, ‘তৌহিদি জনতা’ নিশ্চয়ই সেসব প্রার্থীকেই সমর্থন দেবে, যারা হেফাজতের ১৩ দফার গুরুত্ব তুলে ধরবে, বাস্তবায়ন করবে। এই মতামত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুহাম্মদ ইয়াহইয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিসও যুক্ত ছিলেন।

তাঁদের এ রকম ব্যাখ্যা ও বক্তব্যের সঙ্গে ডিসেম্বরের স্মারকলিপিতে উল্লিখিত ‘ভবিষ্যতে রাজনীতি না করার’ অঙ্গীকারের মিল-অমিল একটা ধাঁধা আকারেই থেকে যাচ্ছে আপাতত।

  • আলতাফ পারভেজ ইতিহাস বিষয়ে গবেষক