স্থিতিশীলতা বিঘ্নের পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। জনমনে উদ্বেগও আছে। সামনে নির্বাচন। এরই মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে মতভিন্নতা থেকে মুখোমুখি রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এমন পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সভাপতি আ ন ম মুনীরুজ্জামানের অভিমত।

আ ন ম মুনীরুজ্জামান

বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং সেটা বেশ একটা ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে আছে। এ ছাড়া বৃহদাকারে যদি আমরা দৃষ্টি দিই, তাহলে বলতে হবে বাংলাদেশ একটা বেশ কঠিন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। বিপ্লবোত্তর পরিবেশে আমাদের যে ধরনের জাতীয় সংহতি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল, রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য একটি মাত্র পথ খোলা আছে। সেটা হলো সঠিক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, রাজনৈতিক ও সমষ্টিগতভাবে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা, যাতে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারি। এটাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমাদের উত্তরণ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।

আরও পড়ুন

ভারত থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং বাংলাদেশে তাদের সমর্থক ও কর্মীদের তাঁরা একধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এটাকে সম্পূর্ণভাবে এবং কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কোনোভাবে এমন পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, যাতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়।

যেকোনো দেশে বিপ্লবোত্তর পরিবেশে বা পরিস্থিতিতে জাতীয় স্থিতিশীলতা এবং অস্থিতিশীলতার ভেতরে খুব ক্ষীণ একটা রেখা থাকে। এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা যদি কোনোভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হই, সেখান থেকে আমাদের ফিরে আসা বেশ কঠিন হবে। কাজেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বাত্মকভাবে নিজেদের কাজে নিয়োজিত থেকে এ ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড, যেটা আওয়ামী লীগ করার চেষ্টা করছে, সেটাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

বর্তমানে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে ধরনের দুর্বলতা লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটাও একটা বড় উদ্বেগের কারণ। আমাদের পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে কাজ করতে পারছে না। গত দেড় বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে এই বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠন করা যায়নি। এর ফলে তাদের যে কর্মদক্ষতা বা যে কর্মক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, তার মধ্যে বড় ধরনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ধরনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের যে গোয়েন্দা সক্ষমতা থাকা দরকার ছিল, সেখানেও বড় ধরনের দুর্বলতা এবং ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কাজেই দুই ক্ষেত্রেই নজর দিয়ে খুব আশু পরিবর্তন এনে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, যদি আমরা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু মতভেদ এমন পর্যায়ে কোনোভাবে পৌঁছানো উচিত নয়, যেটা আমাদের রাজনৈতিক এবং জাতীয় স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করতে পারে। আমাদের সামনে বড় ছবিটা কী, সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। অর্থাৎ ছোটখাটো কারণে যাতে বড় ছবিটা হারিয়ে না যায়, সেটা লক্ষ রেখে আমাদের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। ছোটখাটো বিভেদের কারণে আমরা যাতে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না করি, যাতে আমাদের আসল আকাঙ্ক্ষাটা বাস্তবায়ন হওয়ার আগে হারিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, যেকোনো বিপ্লবোত্তর পরিবেশ যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য একটা নাজুক পরিবেশ। এখানে যদি কোনো ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ