সাক্ষাৎকার: উমামা ফাতেমা

আমি একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাই

প্রথম আলো:

আপনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন। ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেলে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। এর পেছনে কী চিন্তা কাজ করেছে?

উমামা ফাতেমা: ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া, যাঁরা কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, কিন্তু জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতায় এগিয়ে। আমি দীর্ঘদিন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে আমি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমি রাজনীতি করতে গিয়ে যেমন শিখেছি, তেমনি তরুণদের ভাবনা রাজনীতির পরিবেশটাকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে, আমার সে বিষয়ে কাজ করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

শিক্ষার্থীরা কেন আপনাকে বা আপনার প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দেবেন বলে মনে করেন?

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। কার্জন হলের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

উমামা ফাতেমা: অন্য প্রার্থীদের দিকে তাকালেই শিক্ষার্থীরা বুঝবেন যে কেন আমাকে বা আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। অন্য প্রার্থীদের অনেকে বিভিন্ন সংগঠনের প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন। সেই জায়গা থেকে পুরোনো দলীয় প্রভাবের ছাত্ররাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার একটা আশঙ্কা আছে। এখন চিন্তা করতে হবে, আমরা সামনে যেতে চাই নাকি পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একাডেমিক ও রাজনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নিতেই শিক্ষার্থীরা আমাকে ভোট দেবেন বলে মনে করি। আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের নিজ নিজ জায়গা বা ক্ষেত্রে কোনো না কোনো নিজস্বতা ও দক্ষতা আছে। ক্যাম্পাসে হওয়া অন্যায় ও অনিয়ম নিয়ে তাঁরা অতীতে কথা বলেছেন।

প্রথম আলো:

নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

উমামা ফাতেমা: এখন পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) আছে। কিন্তু অনেক প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো, ভোট গ্রহণের জন্য মাত্র আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে খুব কম শিক্ষার্থীই ভোট দিতে পারবেন। আমাদের চাওয়া থাকবে, যাতে কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রার্থীদের প্রচারের সময়ও বাড়ানো দরকার।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

এবারের ডাকসু নির্বাচনে কোন কোন বিষয় ‘ফ্যাক্টর’ (ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ) হতে পারে বলে মনে করেন?

উমামা ফাতেমা: ছাত্রীদের ভোট, জগন্নাথ হলের ভোট এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট—এই তিন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তিন ক্ষেত্রেই আমাদের মনোযোগ আছে। তবে আমরা কাউকে আলাদা করে দেখছি না।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ডাকসুতে ভোট প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ ছাত্রী। আপনি একজন নারী প্রার্থী। ছাত্রীদের জন্য কী করবেন?

উমামা ফাতেমা: ছাত্রীদের আবাসন সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে একটি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনে আমি ও আমাদের প্যানেলের প্রার্থীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ক্যাম্পাসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। গত কয়েক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। নারী ভোটাররা যেমন গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে শামিল ছিলেন, তেমনি নেতৃত্বও দেবেন। এবারের ডাকসুতে সর্বোচ্চ নারী প্রতিনিধিত্ব দেখা যাবে বলে আশা করি।

প্রথম আলো:

নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করতে চান?

উমামা ফাতেমা: নির্বাচিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি একাডেমিক ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করার জন্য আমরা কাজ করব। আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) করব। সেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কৌশল থাকবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো খাবার ও স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রশাসনের সঙ্গে দর–কষাকষি এবং দাবি আদায়ের কাজটি আমরা করে যাব।

আমি সেই ব্যক্তি, যাঁর বোল্ড ভয়েসটা (শক্তিশালী অবস্থান) আছে, বোল্ড ইনটেনশনও (উদ্দেশ্য) আছে এবং একই সঙ্গে রাজনীতির মারপ্যাঁচগুলোও বুঝি। ক্যাম্পাসে হারমোনি (সংহতি) আনা ও ক্যাম্পাসটাকে শিক্ষার্থীদের করে তোলা—এটাই আমার উদ্দেশ্য। আমি মনে করি, এই ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আগামী দিনের ছাত্ররাজনীতি নির্ধারিত হবে।

আমার ডাকসুতে আসার একটা বড় কারণ হলো, আমি একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাই। আগামী দিনগুলোতে জাতীয় রাজনীতিতেও ছাত্রদের পক্ষে একটা বড় ড্রাইভিং ফোর্স (চালক) হয়ে ওঠা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা যেন এমন কাউকে নির্বাচিত করেন, যাঁরা তাঁদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারবেন।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

উমামা ফাতেমা: আপনাকেও ধন্যবাদ।