শ্রীলঙ্কার মতো মেগা প্রজেক্ট করে মেগা লুটপাট চলছে: খন্দকার মোশাররফ

অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন
ছবি: আহমেদ দীপ্ত

দেশে শ্রীলঙ্কার মতো বড় বড় প্রকল্প করে বড় ধরনের লুটপাট চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আজ রোববার দুপুরে এক স্মরণসভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম নামে বিএনপিপন্থী একটি সংগঠন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার তীব্র অর্থনৈতিক সংকট, দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ এবং এর ফলে দেশটির প্রেসিডেন্টের বিদায় এখন বড় আলোচ্য বিষয়। দেশের রাজনীতিতেও এ নিয়ে আলোচনা আছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ একাধিক দলের নেতা সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বক্তব্য দিয়েছেন। আর এসবের জবাবও দিয়েছেন শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতারা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে পারে।’ আর বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।’ এ দুই বক্তব্যের জবাবে গত শুক্রবার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কা এক নয়। শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের প্রতি ইঙ্গিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে কখনো দেরি করেনি।

আজ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যেও উঠে আসে শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কার চেয়ে কম নয়। শ্রীলঙ্কার মতো মেগা প্রজেক্ট (বড় প্রকল্প) করে বাংলাদেশ মেগা লুটপাট চলছে। সেই মেগা দুর্নীতিকে হালাল করার জন্য ঢাকঢোল পিটিয়ে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে রিজার্ভ কত আছে, তা মানুষ জানতে পারছে না। রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। বাংলাদেশ রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে। মেগা প্রজেক্টে তারা তাদের দেনা পরিশোধ করছে। কিন্তু সেটা হিসাবে আনা হচ্ছে না। এটাকে রিজার্ভ দেখিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে হিসাব মিলিয়ে দিচ্ছে। তারপর এখন অঙ্ক মিলাতে পারছে না। যদি তাদের রিজার্ভের গল্প সত্য হয়ে থাকে, তাহলে কেন লিকুইড গ্যাস আনতে পারছে না? কেন ব্যাংকগুলোয় এলসি করতে গেলে এলসি করতে পারছে না?

আরও পড়ুন

খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার মানুষকে না জানিয়ে উচ্চসুদে ঋণ নিয়েছে শুধু নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। ঋণ পরিশোধের সময় এসে গেছে এবং তখনই ধরা পড়ে যাবে, সরকার ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। একদিকে ঋণ দিতে পারছে না, অন্যদিকে আমদানি করতে পারছে না।

প্রয়াত অধ্যাপক এমাজউদ্দীনকে স্মরণ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘অধ্যাপক এমাজউদ্দীনকে হারিয়ে গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তি তাদের অভিভাবককে হারিয়েছে।’

দেশে বৈষম্য আছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্রের, সেই গণতন্ত্র আজ দেশে নেই। যে মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল সাম্যের, সেখানে অর্থনৈতিক অসাম্য–বৈষম্য এত বেশি যে বাংলাদেশে ধনী ও গরিবের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

আরও পড়ুন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আজ বাংলাদেশে শুধু লুটপাটের রাজনীতির জন্য আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি একটা বিপর্যয়ের মুখে। কেন? এই বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায়, তারা যেহেতু গণতান্ত্রিক নয়, তারা যেহেতু গায়ের জোরে ক্ষমতায়, দিনের ভোট রাতে করার সরকার, তাদের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সত্যিকার বুদ্ধিজীবী হওয়া কঠিন কাজ। ভেতর থেকে যাঁরা সমাজের জন্য দায় দায়িত্ব অনুভব করবেন, তাঁরাই হচ্ছেন বুদ্ধিজীবী। বিএনপি কোনো দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনে যাবে না।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই সরকার বিদ্যুৎ উৎসব করে বলে, লোডশেডিংকে আমরা জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন জাদুঘরে যাওয়ার সময় এসেছে তার (সরকারের)। সরকার একটার পর একটা মিথ্যা কথা বলে চলেছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার এখনই সময়।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্র বলে আসলে কিছু নেই। যে রাষ্ট্র অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে মিথ্যা মামলা দিতে পারে, সে রকম একটা রাষ্ট্রে আমরা বসবাস করছি।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ।